আজ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) একাডেমিতে কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনা মহামারি এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকার যথেষ্ট সজাগ রয়েছে।
তিনি বলেছেন, মন্দা থেকে যেন আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারি সে বিষয়ে সজাগ আছি। আমাদের অর্থনীতি এখনো গতিশীল আছে, নিরাপদ আছে। সেটুকু অন্তত আমি বলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে দেশে কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না, কারেন্সি নোট ছিল না, রাস্তাঘাট, ব্রিজ সব ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। তাছাড়া একটি প্রদেশ, তাকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা এবং তার উপযুক্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তিনি অতি দ্রুত করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্বাসন করে পুনর্গঠন করে তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, আমাদের কিছুই ছিল না। তারপরও বন্ধুপ্রতীম দেশের সহযোগিতা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমান বাহিনী গড়ে তোলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর বিশেষ অবদান রয়েছে। যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আমি শ্রদ্ধা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে বারবার ক্যু হয়, বিমান বাহিনীর প্রায় ৬০০ অফিসার ও সৈনিককে হত্যার করা হয়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নানা ঘটনা ঘটে। সরকারে আসার পর বিমান বাহিনীকে আবার নতুনভাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিই। মিগ-২৯ প্রথম কিনে দিই। তাছাড়া সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার রাডারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দিয়ে বিমান বাহিনীকে নতুনভাবে আবার গড়ে তুলি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে এসে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, অপরেশনাল সক্ষমতার বাড়ানোর লক্ষ্যে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান সংযোজনসহ নানা পদক্ষেপ আমরা নিই। বিমান বাহিনী বর্তমানে অত্যন্ত চৌকস ও দক্ষ। শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের বিমান বাহিনী অত্যন্ত চমৎকার ভূমিকা পালন করছে। আমরা সেজন্য গর্বিত।
তিনি বলেন, জাতির পিতা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা নীতিমালা, যেটা তিনি ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করে দিয়েছিলেন, সেই নীতিমালার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকার ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। আজকের বিমান বাহিনী অবকাঠামো, রণকৌশল ও প্রযুক্তির দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, আধুনিক ও চৌকস। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি। কাজেই আমাদের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান এবং বাহিনী প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা দেখি, আমাদের দেশে অন্যান্য দেশ থেকে এসেও ট্রেনিং নিচ্ছে। যেমন নেপাল, ফিলিস্তিন, জাম্বিয়ার অফিসাররা এখানে এসেছেন। নবীন কর্মকর্তাদের বলবো, আমাদের সরকার সবসময় দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা দিয়ে বিমান বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি
ক্যাডেটদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ যেন আমাদের ক্যাডেটদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। তাছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনে আমরা কাজ করি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলতে হয়, সেজন্য প্রশিক্ষকদের কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। প্রশিক্ষকদের কথা সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষণ উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে, এ কথাটা মনে রাখতে হবে। আমাদের স্বাধীন দেশ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা বিশ্ব দরবারে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।