দিরাই উপজেলায় সম্মেলন মঞ্চে ওঠা নিয়ে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা বিএডিসি মাঠে সম্মেলন মঞ্চ ঘিরে এ সংঘর্ষ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে এবং একজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম আজমল হোসেন চৌধুরী। তিনি উপজেলার কুলঞ্জ গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় এবং সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ মিয়ার গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগের দুপক্ষই মৃত আজমলকে নিজেদের লোক বলে দাবি করেছে। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে দুরকম মত পাওয়া গেছে। দিরাইয়ের সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া বলেছেন, আজমল তার মিছিলে ছিলেন, বুকের বামপাশে ইট এসে পড়ায় গুরুতর আহত হয় সে। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে সেখানেই মারা যান। এদিকে নিহত আজমলের ভগ্নিপতি দুলাল আহমদ দাবি, আজমল হোসেন চৌধুরী আগে থেকেই হার্টের রোগী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থল বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল দুপুর একটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে সম্মেলনের মঞ্চ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক পক্ষের অভিযোগ। তবে মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়কে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আট বছর পর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গতকাল দুপুর ১২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে শুরু হয় দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে। সম্মেলন শুরু হওয়ার পর মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দেন প্রদীপ রায়। পরে মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়ের সমর্থকরা মঞ্চ লক্ষ্য করে দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় সম্মেলনস্থলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মঞ্চে থাকা নেতাকর্মীরা প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন। এ ছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে কেন্দ্রীয় নেতাদের রক্ষা করেন।
পুলিশের হস্তক্ষেপে সম্মেলনের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের সঞ্চালনায় সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল সামাদ আজাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়া, সম্মেলনের সভাপতিত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ।
পরে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘যারা আজকে জাতীয় নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই আওয়ামী লীগ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হলো।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। ষড়যন্ত্র আর হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে আটকে রাখা যাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশের উন্নয়ন হয়নি। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারেক রহমান বিদেশে বসে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বিএনপির সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।
এদিকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ড. রায়হান উদ্দিন বলেন, আহতদের মধ্যে ৪০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মারা গেছেন একজন।
জনস্বার্থে নিউজ ২৪ ডটকম