পুরো রাজধানী জুড়ে একটা থমথমে পরিবশ । অজানা আতংক উৎকন্ঠা মানুষের মাঝে বিরাজ করছে। শহরে যানবাহন চলাচল একেবারেই কমে গেছে। আবার কোনো কোনো রুটে বন্ধ হয়ে গেছে বাস। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। অফিসমুখী বা বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর যা কিছুই হচ্ছে তা বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। জনগণের বাড়তি নিরাপত্তার দিক চিন্তা করে এই সুনসান নিরবতা। তবে মাঝে মধ্যে সিএনজি চলাচল করলেও তাতে হাঁকা হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া। বাস না পেয়ে কাউকে কাউকে পিকআপ ভ্যানে করেও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস। ঢাকা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না, আবার ঢাকায় প্রবেশও করছে না। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ রয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন- যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, শ্যামলী, ফার্মগেট, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, শ্যামলী, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে বাসের দেখা মেলেনি। বাসের জন্য বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তবে রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান রুটে (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে) কিছু বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেকক্ষণ পর পর দুই একটি বাস আসলে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। আবার এসব বাসে নির্ধারিত ভাড়ার থেকে নেওয়া হচ্ছে বেশি।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন সোহরাব হোসেন। তিনি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, সেই ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি কোনো বাস নাই। যাও মাঝে মাঝে দু একটি আসছে ভিড়ের জন্য উঠতে পারছি না।
যাত্রাবাড়ী-চিটাগাং রুটে কিছু লেগুনা চলাচল করতেও দেখা গেছে। অন্যান্য গণপরিবহন কমে যাওয়ায় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সমাবেশের স্থান নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। বিএনপি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। তবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি।
এদিকে বহু নাটকীয়তার পর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে সমাবেশ শুরু হবে।
তবে অনুমতি পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাতেই প্রায় ভরে যায় গোলাপবাগ মাঠ।
এরপর আজ ভোর হতেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা যোগ দিতে থাকেন সমাবেশে। এতে করে মাঠ ছাড়িয়ে সড়কে নেমেছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল আর স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন সমাবেশস্থলে আসতে তাদের অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর আগে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে সমাবেশের দিন বাস বন্ধসহ বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ বিএনপির। গাজীপুর থেকে আসা বিএনপির এক নেতা বলেন, এই সরকার আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বাঁধা দিচ্ছে যাতে আমরা সমাবেশকে সফল করতে ব্যর্থ হই কিন্তু কোন বাঁধাই আমাদের থামিয়ে দিতে পারবে না। সরকার এসব করে শুধু হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে আর নিজের পরাজয় ডেকে আনছেে এবং সরকারের পরাজয়ও এখন সুনিশ্চিত।