হাসি-কান্না, হাড়ানো-প্রাপ্তি নিয়ে ২০২২ সাল পার করলো বিশ্ব। মন্দা, যুদ্ধ আর মহামারির প্রভাব রীতিমতো বিষিয়ে তুলেছে বিশ্বকে। আবার সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টারও অন্ত ছিল না। বৈশ্বিক এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজকেও নানাভাবে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সামনের বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কেমন যাবে ২০২৩ সালের রাজনীতি- এমন বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।
আমির হোসেন আমু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গোটা বিশ্বেই নানান সংকট। কোথাও অর্থনীতির, কোথাও যুদ্ধ পরিস্থিতি আবার কোথাও করোনার প্রভাব। এই সংকট বাংলাদেশে প্রভাব রেখেছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যুদ্ধ ও মহামারি প্রশ্নে সামনের বছর সংকট কিছুটা কমবে। আর সংকট যে সরকারের সৃষ্ট নয় তা মানুষও এখন বুঝতে পারছে। এটি বুঝতে পারলে মানুষ হতাশ হবে না। তারাও অংশ নেবে পরিস্থিতি সামলে আনতে।
‘আর এমন সংকট বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে বলে অনেকে মনে করেন। আমি তা মনে করি না। মানুষ তো সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামেনি। মানুষ সরকারের সঙ্গে আছে বলেই আমাদের সমাবেশগুলোতে সমাগম বাড়ছে। বিএনপির সমাবেশেও মানুষ যাচ্ছে। কিন্তু তার প্রভাব রাজনীতির জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে না।’
‘আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীকে টেলিফোন করলেন। বললেন, আপনারা আসুন। নিরেপক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করার তাই করি ঐক্যবদ্ধভাবে। তিনি মানলেন না। হরতালে গেলেন। মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বাইরে আর কোনো বিকল্প ছিল না। এখন আর সমাঝোতা করার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা হওয়াও ঠিক নয়। শান্তি আসুক নিয়মের মধ্য থেকেই।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, দেখুন প্রতিটি দিন বা বছর মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও নতুন বছর ধরে মানুষের নতুন কিছু ভাবনা থাকে। এই সরকার আতঙ্ক আর হিংসা ছাড়া মানুষের মধ্যে কিছুই দিতে পারেনি। আসছে বছর রাজনীতির হিংসা দূর হয়ে শান্তি আসুক। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছি। মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এ বছর হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর।
‘সরকার দেশ ধ্বংস করে ফেলেছে। দুর্নীতি আর লুটপাট করে সব কিছু ধ্বংস করেছে। লাখ লাখ কোটি টাকা বাইরে পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে। এই ধ্বংসাবস্থা ঠিক করতে হলে আগে গণতন্ত্র ঠিক করতে হবে। আমরা রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য মানুষকে পাশে চাইছি। মানুষ মানুষের মাঝে শান্তির বার্তা নিয়ে আন্দোলনে শরিক হোক এই প্রত্যাশা করছি।’
অন্যদিকে আগামী বছর অত্যন্ত সংঘাতময় হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বড় দুর্ভোগের সময় অপেক্ষা করছে অন্তত সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণে। সরকারের দমন-নীতি অতীতের মতোই হবে এবং আরও বাড়তে পারে ক্ষেত্রেবিশেষে।
‘কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, বলপ্রয়োগ করে মানুষের অধিকার চিরতরে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আসছে বছর বিশ্বে মন্দা দেখা দেবে বলে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশকেও এর বেগ পোহাতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সরকার মানুষের অধিকারে সম্মান দেখাতে বাধ্য হবে। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ কী চায়, তা আগে রাজনীতিকদের বুঝতে হবে। মানুষের বাইরে কোনো কিছু থাকতে পারে না।’
‘আমরা চাই ২০২২ সালের মতো যেন ২০২৩ সালের পরিস্থিতি না হয়। সরকার মানুষের আবেগ বুঝতে চেষ্টা করুক। গুম, খুনের রাস্তা পরিহার করুক। এই দুঃসময়ের অবসান হোক। সাধারণ মানুষকে আর কষ্ট না দিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর আহ্বানে সাড়া দিক। নতুন বছরে মানুষ তার ভোটাধিকার ফিরে পাক।’
আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফও শান্তির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সামনের বছরও এই ধারাবাহিকতা থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি। রাজনীতির কেন্দ্রে মানুষ। মানুষ ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকি।
‘আমরা শত সমস্যা মোকাবিলা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। আগামী দিনেও মানুষকে সঙ্গে পাবো বলে আশা করছি। দেশ, দেশের মানুষ আগামী দিনে শান্তিতে থাকবে এই প্রত্যাশা করছি।’