বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় কয়েক ধাপ নেমে যাওয়ার পর, এবার এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তকমা হারালেন ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি। তাকে টপকে আবারও এশিয়ার শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করছেন আরেক ভারতীয় ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি।
কয়েকদিন আগে মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। দ্রুত কমতে থাকে শেয়ারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক দিনে প্রায় ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয় আদানি গ্রুপ।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলে, ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানি তিন থেকে ১৫ তে নেমে এসেছেন। ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮০.৩ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় শীর্ষ ১০ এ প্রবেশ করেছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। ৮ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছেন আম্বানি।
আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার আদানির সম্পদের অন্যতম উৎস বলা হয়, যা বুধবারও ৩০ শতাংশ কমেছে। আদানি পাওয়ারের শেয়ারমূল্য কমেছে ৫ শতাংশ ও আদানি ‘টোটাল’ গ্যাসের শেয়ারমূল্য ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের দাম কমেছে ৬ শতাংশ ও আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ কমেছে।
আদানি ‘টোটাল’ গ্যাসের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ফ্রান্সের ‘টোটাল’ গ্যাস কোম্পানির। জানা যায়, গত কয়েকদিনে আদানি টোটাল প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার হারিয়েছে, যা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় লোকসান।
মুম্বাইভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক, অম্বরিশ বালিগা বলেন, মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম খুব সামান্য বাড়লেও বুধবার তা আবার কমেছে। হিডেনবার্গের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই গ্রুপটির শেয়ারের দাম আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, জালিয়াতির অভিযোগের জবাব দিলেও, আদানি গ্রুপের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে।
গত সপ্তাহে ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলে, শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে কয়েকগুণ বাড়িয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে আদানি গ্রুপ। কারচুপি করেই তিন বছরে আদানির শেয়ারসংক্রান্ত সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশেরও বেশি।
ধোঁকাবাজির অভিযোগ ওঠার পর থেকে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়, যা কোনোভাবেই থামছে না। আদানি গ্রুপকে নিয়ে দুই বছর তদন্তের পর এ বছরের ২৪ জানুয়ারি গুরুতর অভিযোগের বিশদ বিবরণসহ একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগও তোলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থাটি।
হিডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাব দেয় আদানি গ্রুপ। সেখানে বলা হয়, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটি কেবল নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির ওপর অন্যায় আক্রমণ নয়, বরং ভারতের ওপর, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, অখণ্ডতা-গুণমান ও ভারতের আকাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিলেন আদানি। ওই সময় এ ধনকুবের ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিশাল জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন ও কিছু প্রমাণও দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। কিন্তু এসবের পরও শেয়ার পতন ও সম্পদ খোয়ানো থামাতে পারছেন না আদানি।