ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পর্যটন জেলাখ্যাত মৌলভীবাজারের পর্যটন এলাকাগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। জেলার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। গত শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদের দিন ও রবিবার (২৩ এপ্রিল) ঈদের পরদিন জেলার অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পটে দর্শনার্থীদের এমন ভিড় লক্ষ করা যায়।লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা নারায়ণগঞ্জের কলেজশিক্ষক মো. ইব্রাহিম শেখ ও রকিফ মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রায় ১০ বছর আগে শ্রীমঙ্গল ও লাউয়াছড়া এলাকায় বেড়াতে এসেছিলাম। এবার ঈদের ছুটিতে স্ত্রী চাকরীজীবী শফিকুন্নাহার, ছেলে মুহিবুর শেখ ও কন্যা জয়নব শেখকে নিয়ে এলাম লাউয়াছড়ায়। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবারই প্রথম এলো এ অঞ্চলে। তারা বেশ উচ্ছ্বসিত।’ঈদের পরদিন মাধবপুর লেক এলাকায় কথা হয় ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শান্তনা পাল ও রাখি আক্তারের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘এ অঞ্চলটি সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়। আমরা বারবার মৌলভীবাজার জেলায় আসি প্রকৃতির টানে। প্রতিবারই মনে হয় থেকে যাই এখানে।’কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল দেখতে আসা ব্যবসায়ী মো. আক্তারুজ্জামান দিপুর ও আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা হয় বাইক্কা বিলে। তারা বলেন, ‘ঈদের দিন কাটিয়েছি হাকালুকি হাওরে। ঈদের পরের দিন এলাম বাইক্কা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এবারের ঈদ কাটালাম প্রকৃতির স্বর্গরাজ্যে। আরও কয়েক দিন থেকে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার ইচ্ছা আছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ বড়লেখা জোনের ইনচার্জ আক্তার হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদে ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যকদের নিরাপত্তা বিধানে প্রতিটি পর্যটন স্পটেই আমরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে চলেছি। আমাদের মোবাইল টিম পর্যটন স্পটগুলোর আশপাশে সক্রিয় আছে। পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে বিশেষ বাহিনী কাজ করছে।’মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাত সদস্যের একটি দল পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, ‘জলপ্রপাতের কাছাকাছি গিয়ে গোসল না করতে রশি টানিয়ে সীমানা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। হ্যান্ডমাইকেও এ ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।’কাউন্টারে থাকা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের কর্মচারী সাজু আহমদ জানান, দুই দিনে অন্তত দুই লাখ পর্যটক টিকিট বিক্রি হয়েছেন। ঈদের ছুটিতে দূরদূরান্তের কোন পর্যটকদের সমাগম ঘটেনি। সবাই ছিল স্থানীয় পর্যটক। কিছু পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত।’মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে যাতে কোনও পর্যটক হয়রানির শিকার না হন, এ জন্য স্পটগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। নির্ভয়ে পর্যটকরা ভ্রমণ করে যাতে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে জেলা পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।’