সরকার হটানোর আন্দোলন, নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার একসাথে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়। সেখানে সরকার ‘হটাতে’ যুগপৎ আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছে বিএনপি ও সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। আন্দোলন ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হবে এ কমিটি; যার মাধ্যমে আন্দোলনের লক্ষ্য, দফা, কর্মসূচি, রূপরেখা সবগুলো ঠিক করবে।
দুপুর পৌনে ১২টা থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এদিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। সারা পৃথিবীর কাছে আজকে মেসেজ যাবে, বাংলাদেশের জনগণ রাতের অন্ধকারে যারা ভোট চুরি করেছে, অনৈতিকভাবে ও অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে তাদের সরানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হবে। রাজনৈতিকগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের শুধু পতন ঘটাবে না; রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান সংস্কার করবে। আন্দোলন ও নির্বাচন দুইটাই একসঙ্গে করবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের একটা আগ্রহ-উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিষয়কে ত্বরান্বিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত একটা লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করব। যার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের দফাগুলো, আমাদের কর্মসূচি, রূপরেখা সবই থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, ‘এ সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে আমরা একযোগে যুগপৎ আন্দোলন করব। এ ব্যাপারে বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি। ইতোমধ্যে এই কাজ আমরা শুরু করেছি। রাষ্ট্রের পরিবর্তনের যে কথা তা আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করে আশা করি একমত হতে পারব। আমরা এ বিষয়টাকে দ্রুত করার জন্য পরবর্তিতে আরও কয়েকটি আলোচনায় বসব। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছব বলে আমরা নিশ্চিত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে আপাতত যুগপৎ আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে পারব। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করতে সক্ষম হব।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমরা যুগপৎভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। বলা যায় এখন থেকেই আন্দোলনে আছি, আন্দোলনে থাকব। বিএনপির ভিশন-২০২০ তে বর্ণিত বিভিন্ন প্রস্তাবনার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবনার মিল রয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি নির্বাচনের বিষয় স্পষ্ট করে বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা কেউ যাব না। যেটা দাবি করেছি তা হচ্ছে- এই সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে।’
বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাবিবুর রহমান রিজু এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন ও সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমুখ।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বিদেশে ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের একটি বিদেশি দূতাবাসে প্রোগ্রাম থাকায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি বলে জানান গণতন্ত্রের মঞ্চের নেতারা। আর বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
গত আগস্ট মাসে আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চে রয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা আওয়ামী লীগ সরকরের পদত্যাগের দাবি করে আসছে। সরকার পতনের আন্দোলনের দাবিনামা চূড়ান্ত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে এই সংলাপে বসল বিএনপি। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠনের পর এটি বিএনপির সঙ্গে তাদের প্রথম বৈঠক।
এর আগে চলতি বছরের মে-জুন মাসে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জনসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে পৃথকভাবে সংলাপ করেছিল বিএনপি।
জনস্বার্থে নিউজ24.কম