আমদানি খরচ বাড়ায় কাগজের মিলগুলোতে কাঁচামাল সংকট যার ফলে কাগজ তৈরীতে বড় বাঁধার সম্মূখীন হচ্ছে মিলগুলি। এতে করে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উৎপাদন। অগ্রিম অর্ডারের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন তারা। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রেস মালিকরা। তারা কাগজ সংকটে কার্যাদেশ পেয়েও বই ছাপাতে পারছেন না। বেশি পিছিয়ে প্রাথমিকের বই ছাপানো। তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলছেন, প্রেস মালিকরা বুঝেশুনেই দরপত্র দিয়ে কাজ নিয়েছেন। যেভাবেই হোক তারা বই দেবেন। সঠিক সময়ে বই দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুদ্রণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, আগামী বছরের জন্য এনসিটিবি এবার মোট ৩৩ কোটি ২৮ লাখ বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তার মধ্যে ১০ লাখ প্রাথমিকের বই রয়েছে। বাকিগুলো মাধ্যমিক পর্যায়ের (কারিগরি ও মাদরাসাসহ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বই), ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ব্রেইল বই রয়েছে। তিন মাস আগে কাগজ মিলে টাকা দিয়েও এখনো কাগজ পাচ্ছেন না প্রেস মালিকরা। সে কারণে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ও ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বই ছাপার কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিকের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির দরপত্র আগে হওয়ায় এ পর্যন্ত দেড় কোটির মতো বই পাঠানো সম্ভব হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের সাত কোটির মতো বই হয়েছে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি বই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মাতুয়াইল ফাহিম প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স পাঁচ লটে মাধ্যমিকের প্রায় ১২ লাখ আর প্রাথমিকের তিনটি লটে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ১৪ লাখ বই ছাপার কার্যাদেশ পায়। এর মধ্যে মাধ্যমিকের ৬০ শতাংশ বই ছাপানো সম্ভব হলেও প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরু করেনি। প্রতিষ্ঠানের মালিক শামসুল ইসলাম বাহার বলেন, গত তিন মাস আগে কাগজ মিলে অগ্রিম টাকা দিলেও এখনো তারা কাগজ দিচ্ছে না। এখন টাকা ফেরত দিচ্ছে চাচ্ছে। কাগজ না পাওয়ায় আমরা প্রাথমিকের বই ছাপানো শুরু করতে পারছি না।
তিনি বলেন, একদিকে এনসিটিবি কার্যাদেশ দিতে দেরি করেছে, তার ওপর কবে কাগজ পাওয়া যাবে সেটিও অনিশ্চিত হওয়ায় আমরা নিরুপায় হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। এ বিষয়ে এনসিটিবির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সহযোগিতা করছে না। কাগজ সরবরাহ করতে না পেরে মিল বন্ধ রাখা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীর মৌসুমী অফসেট প্রেসের মালিক মো. নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির সাতটি লটে পাঁচ লাখ আর প্রাথমিকের প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির পাঁচ লটে ১২ লাখ বইয়ের কার্যাদেশ পেলেও কাগজ না পাওয়ায় বই ছাপানোর কাজ শুরু করতে পারিনি।
‘কাগজ তৈরিতে বিদেশ থেকে পাল্প আমদানি করতে হয়। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর ও সংকটের কারণে এর দাম দুই গুণ বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশের ৯৮ শতাংশ কাগজ মিল বন্ধ রাখা হয়েছে। তার ওপর বই তৈরিতে কালি, কেমিক্যালসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এবার মুনাফা তো দূরের কথা, লস দিয়েও কাগজ ও কাঁচামাল সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রেসের কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাজারে কাগজ নেই। ডলারের দাম দেড়গুণ হয়ে যাওয়ায় কাগজ মিল মালিকদের কাগজ তৈরিতে আমদানি করা পাল্পের জন্য দেড়গুণ বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সে কারণে বন্ধ রয়েছে কাগজ উৎপাদন। কাগজ না পেয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রাথমিকের বই ছাপানোও বন্ধ।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ বই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে মাধ্যমিকের দরপত্র আগে হওয়ায় । প্রাথমিকের পাঁচ শতাংশ বইও ছাপা হয়নি। প্রেস মালিকরা তিন-চার মাস আগে কাগজের জন্য বুকিং দিলেও বর্তমানে সে দরে কাগজ সরবরাহ করতে না পেরে অধিকাংশ কাগজ মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা কবে বই পাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে দুই-তিনটি বই তুলে দেওয়া সম্ভব হলেও এবার অধিকাংশ উপজেলায় বই পাঠানো সম্ভব হবে না।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কাগজ সংকটের জন্য প্রাথমিকের বই ছাপানো বন্ধ রাখা হয়েছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমি মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কয়েকটি প্রেস পরিদর্শন করেছি। প্রেস মালিকরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। পরে দুপুরে প্রকাশনা মালিকদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। সর্তক করে দেওয়া হয়েছে তাদের। দরপত্র অনুযায়ী সব বই নির্ধারিত সময়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা প্রেস মালিকদের পা ধরে আর তেল মাখিয়ে কাজ করাবো না। তাদের সঙ্গে দরপত্রে যে চুক্তি হয়েছে সে মোতাবেক আমাদের সময়মতো বই দিতে হবে। নতুবা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনস্বার্থে নিউজ 24 ডটকম