২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের একটি রাত। ভয়াবহ ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা কলঙ্কিত করে সিলেটের মাটি মানুষকে। ওই রাতে সিলেটের মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের ছেলেরা স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে উন্মাতাল হয়ে উঠে। অসহায় স্বামী শুধু নেকড়ের দলের অট্টহাসি দেখেছেন আর কান্নাভেজা কণ্ঠে আকুতি মিনতি করেছেন কিন্তু ওরা শুনেনি। ওরা তখন হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়েছিল প্রিয়তমা স্ত্রীর উপর।
দীর্ঘ দিন পর উক্ত সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
আদালতের রায়ের বিষয়টি ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন জানিয়ে বলেন, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর চেয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করে। আজ রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে আদালত। রায়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এম. আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর চেয়ে গত ১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করে ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী।
কেন আদালত পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রিটকারীর আইনজীবী বলেন, সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। সেটা কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েই সরকার বসে আছে। সেটি আর বাস্তবায়ন করছে না। এ কারণে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে তরুণীকে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন।
এ মামলায় আটজনকে অভিযুক্ত করে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
গত বছরের ১৭ জনুয়ারি এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরী।
এছাড়া এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়রা আদালতে পৃথক চার্জশিট দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে আসামিরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল, মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজন, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম।