ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo সুনামগঞ্জে জমিয়ত নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী নিখোঁজ Logo বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথপুরে আলোচনা সভা ও দলীয় কার্যালয় উদ্ভোধন Logo মধ্যনগরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদের ফরম ক্রয়কে ঘিরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে Logo বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জে বর্ণ্যাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo শান্তিগঞ্জে মানসিক রোগীর লাশ উদ্ধার Logo শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী বৈঠক অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর জমিয়তের সভাপতি মাসরুর কাসেমীর সাথে হাম্মাদ গাজিনগরীর বৈঠক Logo শান্তিগঞ্জে ব্যতিক্রমধর্মী গণসংযোগে মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী Logo সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ Logo শান্তিগঞ্জে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পোনামাছ অবমুক্ত

দেশি হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সুনামগঞ্জের বেকার যুবকরা

হাঁসের খামার করে দ্রারিদ্রতাকে দুরে টেলেছেন সুনামগেঞ্জর অনেক হাঁসের খামারী। সুনামগঞ্জ জেলা জুড়ে রয়েছে বিশাল হাওড়। আর সেই হাওড়ের বুকে হাঁসের অবাদ বিচরন ঘটে। যার ফলে হাঁসের দল সহজেই হাওড় থেকে  প্রাকৃতিক খাবার খেতে পারছে। এতে করে খামারীদের বিরাট একটা অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে হাঁস পালন সম্ভব নয় খামারীদেরকে বাজারের কৃতিম খাবার কিনেও খাওয়াতে হয়। তবে লাভের পরিমাণও কয়েকগুন বেমি পাচ্ছেন প্রতিটা খামারী।  এতে করে দিন দিন হাওরে হাঁস পালনের কদর বেড়েই চলছে।  নিজেদেরসহ পর্যটকদের মাংসের চাহিদা মেটাতে এখন হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন স্থানীয়রা। এ বছর হাঁসের মাংসের দাম অন্য বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় খামারিদের এখন হাঁসপালনে আগ্রহও বেড়েছে।

এছাড়া হাওর-বাওড়ের এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল ও জলাশয়। যা হাঁস পালনের জন্য ভালো সুযোগ ও সম্ভাবনাময় স্থান বলা যায়।

সুনামগঞ্জ শহরতলির লালারচর গ্রামের সুকান্ত পালের একসময় ভাঙা ঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে করেন হাঁসের খামার। বর্তমানে তিনি একজন হাঁসের সফল খামারি। বছরে দুবার হাঁসার বাচ্চা এনে বড় করে বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর করেছেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন তিনি। দু’বছর হলো তারা চার ভাই এবং ষাটার্ধ্ব বাবা সমর পালও হাঁসের খামারে কাজ করেই সময় কাটান বেশি।

সুকান্ত পাল জানালেন, দিরাইয়ের দত্ত গ্রাম থেকে আশ্বীন মাসের ২৫ তারিখে প্রতিটি ৩৬ টাকা করে ৬০০ হাঁসের বাচ্চা এনেছিলেন। যা পাঁচ মাসে বিক্রয় উপযোগী করে তুলতে তার খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। দু’দিন আগে তার একশ হাঁস ৪০ হাজার টাকা দাম হাকেন এক পাইকারি বিক্রেতা। কিন্তু তিনি দেননি, আশা করছেন একশ হাঁস এবার ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। হাঁস বিক্রি করে সুকান্ত এখন লাখপতি।

কেবল সুকান্ত পালই নয়, জেলায় ৪ হাজার ৭শ জন এই হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। এসব খামার ও গৃহস্থ পরিবারে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওর-বাওরের এই জেলা সুনামগঞ্জে রয়েছে নানা পর্যটন স্থান। যে জায়গাগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এক সময় পর্যটকদের খাবারের তালিকায় মোরগ, হাওরের সুস্বাদু মাছ ও পাখি থাকলেও বর্তমানে তা বদলে গেছে। খাবারের তালিকায় প্রথম পছন্দের খাবার হিসেবে থাকছে হাঁসের মাংস।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সামিরা চৌধুরী বলেন, এক সময় হাঁস আমার খেতে ভালো লাগত না। কিন্তু সুনামগঞ্জে এসে হাঁসের মাংস খেয়ে এতটা স্বাদ পেয়েছি যে এখন হাঁসের মাংসকে পছন্দের তালিকায় প্রথম রেখেছি।

সিলেট থেকে আসা নাদিয়া বেগম বলোন, হাঁসের মাংসের তরকারি এমনিতেই আমার খুব ভালো লাগে। তবে সুনামগঞ্জের হাঁসের মাংসের আলাদা স্বাদ।

দিনাজপুর থেকে আসা রাহুল, সায়মন ও জিলান  বলেন, আমরা তিনজন সুনামগঞ্জে বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে সবাই বলছে হাঁসের মাংস নাকি অনেক মজা। তাই তিন বন্ধু মিলে দুপুরের খাবার হাঁসের মাংস দিয়ে করলাম। যে স্বাদ পেয়েছি তা জীবনেও ভুলব না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা জানান, সুনামগঞ্জে দুই ধরনের হাঁস পালন করা হয়। খাকী ক্যাম্বেল, যেটির উৎপত্তিস্থল ইংল্যান্ড। আরেকটি হচ্ছে জিনিডিং, এর উৎপত্তিস্থল চীন। এই দুই ধরনের হাঁসই প্রাপ্তবয়স্ক হলে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভিএফএ মনোরঞ্জন দাসের মতে, হাওরের কিছু খাল, ডোবা লিজ না দেওয়া না হলে হাঁসের খামার আরও বেড়ে যেত এবং সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরোও লাভবান হতো।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিনামূল্যে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে খামারিদের। সুনামগঞ্জে হাঁসের মাংস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামীতে যাতে আরো বেশি হাঁসের খামার গড়ে ওঠে সেদিকে তারা নজর দিচ্ছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন

সুনামগঞ্জে জমিয়ত নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী নিখোঁজ

দেশি হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সুনামগঞ্জের বেকার যুবকরা

আপডেট সময় ০৫:৪০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩

হাঁসের খামার করে দ্রারিদ্রতাকে দুরে টেলেছেন সুনামগেঞ্জর অনেক হাঁসের খামারী। সুনামগঞ্জ জেলা জুড়ে রয়েছে বিশাল হাওড়। আর সেই হাওড়ের বুকে হাঁসের অবাদ বিচরন ঘটে। যার ফলে হাঁসের দল সহজেই হাওড় থেকে  প্রাকৃতিক খাবার খেতে পারছে। এতে করে খামারীদের বিরাট একটা অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে হাঁস পালন সম্ভব নয় খামারীদেরকে বাজারের কৃতিম খাবার কিনেও খাওয়াতে হয়। তবে লাভের পরিমাণও কয়েকগুন বেমি পাচ্ছেন প্রতিটা খামারী।  এতে করে দিন দিন হাওরে হাঁস পালনের কদর বেড়েই চলছে।  নিজেদেরসহ পর্যটকদের মাংসের চাহিদা মেটাতে এখন হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন স্থানীয়রা। এ বছর হাঁসের মাংসের দাম অন্য বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় খামারিদের এখন হাঁসপালনে আগ্রহও বেড়েছে।

এছাড়া হাওর-বাওড়ের এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল ও জলাশয়। যা হাঁস পালনের জন্য ভালো সুযোগ ও সম্ভাবনাময় স্থান বলা যায়।

সুনামগঞ্জ শহরতলির লালারচর গ্রামের সুকান্ত পালের একসময় ভাঙা ঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে করেন হাঁসের খামার। বর্তমানে তিনি একজন হাঁসের সফল খামারি। বছরে দুবার হাঁসার বাচ্চা এনে বড় করে বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর করেছেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন তিনি। দু’বছর হলো তারা চার ভাই এবং ষাটার্ধ্ব বাবা সমর পালও হাঁসের খামারে কাজ করেই সময় কাটান বেশি।

সুকান্ত পাল জানালেন, দিরাইয়ের দত্ত গ্রাম থেকে আশ্বীন মাসের ২৫ তারিখে প্রতিটি ৩৬ টাকা করে ৬০০ হাঁসের বাচ্চা এনেছিলেন। যা পাঁচ মাসে বিক্রয় উপযোগী করে তুলতে তার খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। দু’দিন আগে তার একশ হাঁস ৪০ হাজার টাকা দাম হাকেন এক পাইকারি বিক্রেতা। কিন্তু তিনি দেননি, আশা করছেন একশ হাঁস এবার ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। হাঁস বিক্রি করে সুকান্ত এখন লাখপতি।

কেবল সুকান্ত পালই নয়, জেলায় ৪ হাজার ৭শ জন এই হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। এসব খামার ও গৃহস্থ পরিবারে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওর-বাওরের এই জেলা সুনামগঞ্জে রয়েছে নানা পর্যটন স্থান। যে জায়গাগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এক সময় পর্যটকদের খাবারের তালিকায় মোরগ, হাওরের সুস্বাদু মাছ ও পাখি থাকলেও বর্তমানে তা বদলে গেছে। খাবারের তালিকায় প্রথম পছন্দের খাবার হিসেবে থাকছে হাঁসের মাংস।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সামিরা চৌধুরী বলেন, এক সময় হাঁস আমার খেতে ভালো লাগত না। কিন্তু সুনামগঞ্জে এসে হাঁসের মাংস খেয়ে এতটা স্বাদ পেয়েছি যে এখন হাঁসের মাংসকে পছন্দের তালিকায় প্রথম রেখেছি।

সিলেট থেকে আসা নাদিয়া বেগম বলোন, হাঁসের মাংসের তরকারি এমনিতেই আমার খুব ভালো লাগে। তবে সুনামগঞ্জের হাঁসের মাংসের আলাদা স্বাদ।

দিনাজপুর থেকে আসা রাহুল, সায়মন ও জিলান  বলেন, আমরা তিনজন সুনামগঞ্জে বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে সবাই বলছে হাঁসের মাংস নাকি অনেক মজা। তাই তিন বন্ধু মিলে দুপুরের খাবার হাঁসের মাংস দিয়ে করলাম। যে স্বাদ পেয়েছি তা জীবনেও ভুলব না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা জানান, সুনামগঞ্জে দুই ধরনের হাঁস পালন করা হয়। খাকী ক্যাম্বেল, যেটির উৎপত্তিস্থল ইংল্যান্ড। আরেকটি হচ্ছে জিনিডিং, এর উৎপত্তিস্থল চীন। এই দুই ধরনের হাঁসই প্রাপ্তবয়স্ক হলে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভিএফএ মনোরঞ্জন দাসের মতে, হাওরের কিছু খাল, ডোবা লিজ না দেওয়া না হলে হাঁসের খামার আরও বেড়ে যেত এবং সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরোও লাভবান হতো।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিনামূল্যে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে খামারিদের। সুনামগঞ্জে হাঁসের মাংস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামীতে যাতে আরো বেশি হাঁসের খামার গড়ে ওঠে সেদিকে তারা নজর দিচ্ছেন।