সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরের মধ্যে ৫২টি হাওরের বোরো ফসল আগাম বন্যা ও পাহাড়ী ঢলের হাত থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধঁ মেরামত ও সংস্কার কাছ করছে। উপজেলা প্রশাসনকে অর্ন্তভুক্ত করে স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে ১০৭৮টি পিআইসির মাধ্যমে ৭৪৮কি:মি: বাঁধ মেরামত, সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মানে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পিআইসির মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনও অর্ধেক কাজই শেষ হয়নি। স্থানীয় কৃষকদের গণ শুনানীর মাধ্যমে পিআইসি গঠনের নীতিমালা থাকলেও মানছে না পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে নির্ধারিত সময়ে বাধঁ নির্মানসহ ফসল রক্ষায় শঙ্কিত কৃষক পরিবার।
সূত্র জানায়, হাওর কন্যা সুনামগঞ্জের কৃষকদের একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভর করে সারা বছর চলতে হয় তাদের। একবার হাওরের ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে গেলে কৃষকের দু:খের সীমা থাকে না। ২০১৭ সালে পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের নানান অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে হাওরের ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়েছিল পুরো জেলার কৃষক পরিবার। তখন স্থানীয় কৃষক, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীদের অগ্রণী ভুমিকার ফলে ঠিকাদারী প্রথা বিলুপ্ত করে পিআইসি প্রথা চালু করে সরকার। স্থানীয় কৃষদের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের সর্ম্পৃক্ততার মাধ্যমে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় পিআইসি গঠন না করে উৎকোচ ও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভান্বিত হয়ে পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পিআইসি গঠন করছেন। কাকে পিআইসির কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, জানেন না স্থানীয় কৃষকরা।
পিআইসি গঠনে অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উত্থাপন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কৃষকদের অভিযোগ, গেল বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ তিনগুণ বরাদ্দ বাড়িয়েও কৃষকদের কষ্টার্জিত সোনালী ফসল রক্ষায় নিয়ে সন্দিহার তারা। দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরে জলডোবা ভাঙন রোধে পূর্বের বাঁধে বাধ না করে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি পিআইসি গঠন করলেও কারা পিআইসিতে আছেন, জানেন না স্থানীয় সুবিধাভোগী কৃষকরা।
জলডোবা ভাঙন মেরামত করতে ও পূর্বের বাধে বাঁধ নির্মাণ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। তবে দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরে জলডোবা বাঁধ পুন:নির্মাণের দাবীর প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ পাউবোর পওর-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন, পূর্বের বাঁধে বাঁধ নির্মাণ করা হলে হাওরের ফসল রক্ষায় ঝুকির মধ্যে থেকে যায়। তাই ১৫শ ফুট ঘুরিয়ে ৫টি পিআইসির মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, চলতি বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৩শ হেক্টর বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তন্মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। বাকী ধান আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। হাওরের বাঁধ মেরামত ও সংস্কার কাজে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তদারিক করছেন।
হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় কৃষকদের দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন স্বচ্ছতার মাধ্যমে পিআইসি গঠনসহ অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত পাউবোর কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বিরুদ্ধে গোপন তদন্তের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ দাবী ভুক্তভোগী কৃষকদের।