রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। সংস্থাগুলোর তদন্তের পর নিরাপদ ঘোষণা করলেই ভবনের বাসিন্দারা ঘরে ফিরতে পারবেন।পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মঙ্গলবার এমনটা জানিয়েছে।আগুন লাগার পর থেকে ভবনটির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া অগ্নিকান্ডে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গুলশান থানায় অপমৃতুর মামলা হয়েছে।গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়িতে রোববার রাত সোয়া ৭টার দিকে আগুন লাগে। একপর্যায়ে আগুন ভবনের ১২ তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়েছেন দুজন। দু’মাস বয়সী এক শিশুসহ ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়। আহতরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা মঙ্গলবার জানান, ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের মালিকরা আসছেন। বাসিন্দাদের অনেকে ফ্ল্যাটে এসে আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া প্রয়োজনীয় কিছু কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা আসছেন। তারা ভবনটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন।অগ্নিকাণ্ডের তৃতীয় দিনেও মঙ্গলবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জানান, পুলিশ ভবনটির বাইরে অবস্থান করে নিরাপত্তা দিচ্ছে।ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত বা বসবাসের উপযুক্ত কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত করছে। এখনও ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করলে বাসিন্দারা ফ্ল্যাটে ফিরতে পারবেন।’
গুলশান থানায় অপমৃত্যুর মামলা
আগুনে দুজনের প্রাণহানির ঘটনায় গুলশান থানায় একটি অপমৃতুর মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ঢাকার এরিয়া ম্যানেজার মো. রাকিব হাসান মামলাটি দায়ের করেন।গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আজিজ জানান, অভিযোগপত্রে (এজাহার) উল্লেখ করা হয়েছে, আগুন লাগা ভবনটির ১২ তলার ফ্ল্যাট নম্বর এ-১২ ও এ-১৩ এর মালিক এক্মি গ্রুপের পরিচালক ফাহিম সিনহা। ভবনের পঞ্চম তলায় ইলেক্ট্রিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। পরে আগুন দ্রুত ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে।অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই ফ্ল্যাটে কর্মরত ছিলেন কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন ও বাবুর্চি রাজিব পাইরিস রাজু। আগুন লাগার পর তারা জীবন বাঁচাতে ভবনের নিচের সুইমিং পুলে লাফিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় আনোয়ারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর সিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ৩টার দিকে মারা যান রাজিব।
শামা রহমান এখনও শঙ্কামুক্ত নন
একমি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী শামা রহমান সিনহার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।শামা রহমান অগ্নিকাণ্ডের সময় লিফটে আটকা পড়েছিলেন। একপর্যায়ে ৭ তলায় লিফট থেকে বের হন। পরে দিশেহারা হয়ে ভবনের নিচের সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন। এতে তিনি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান।এছাড়া আহত রওশন আলী ও মুসা শিকদারকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে তাদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেন চিকিৎসকরা।