বিএনপি সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে তাদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার দেশজুড়ে জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে।তবে ঢাকা জেলার পদযাত্রা কর্মসূচি রবিবার হওয়ার কথা রয়েছে।পটুয়াখালী ও নীলফামারীসহ কয়েকটি জায়গায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা পুলিশের বাধার কারণে দলটি এই কর্মসূচি সফল করতে পারেনি।শনিবারের কর্মসূচি শেষে দলের পক্ষ থেকে আগামী ৪ঠা মার্চ সব মহানগরের আওতাধীন থানাগুলোতে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।তবে এখন প্রশ্ন উঠছে যে ডিসেম্বরে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শক্ত অবস্থান বিএনপির দেখা গিয়েছিলো সেটিকে আদৌ দলটি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের বিরুদ্ধে চাপ হিসেবে তৈরি করতে পেরেছে কি-না।দশই ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের জের ধরে দলের মহাসচিবসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করেছিলো পুলিশ।এছাড়া কয়েকটি বিভাগীয় সদরে সমাবেশ ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিলো কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতির পাশাপাশি সরকারি দল ও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে।কিন্তু সেই ধারা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে তারা কতটা সফল হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে বড় প্রশ্ন।যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন যে সরকার চাপ অনুভব করছে বলেই বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে’ বলে মনে করছেন তারা।“খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি-না এ নিয়ে সরকারের চারজন মন্ত্রী চার ধরনের কথা বলেছেন। কতটা অস্থিরতায় ভুগলে এটা হতে পারে! এই অস্থিরতা তো চাপ থেকেই এসেছে,” বলছিলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।আরেকজন যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিএনপির ধারাবাহিক প্রতিবাদের কারণেই সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে এবং সামনে তারা আরও চাপ অনুভব করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলছেন গত ডিসেম্বর নাগাদ একটা মোমেন্টাম বিএনপি তৈরি করলেও পরে সেটাকে আর ধরে রাখতে পারেনি।“আসলে দলটি তাদের কর্মী সমর্থকদের নামাতে পেরেছে কিন্তু একটা আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতার জন্য মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে আনার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা তারা দেখাতে পারেনি। আর এর কারণ হলো সরকারি দল আওয়ামী লীগ বরাবরই সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলে শক্তিশালী।”মি. চক্রবর্তী বলছেন, যে পরিস্থিতি তৈরি হলে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসে তেমন কোনো পরিস্থিতি বিএনপি তৈরিই করতে পারেনি।“তবে বিএনপি চেষ্টা করছে এবং সেই চেষ্টাটা গত কিছুদিন ধরেই অনেক বেশি প্রকট। যদিও সরকারের অবস্থান ও কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষকে রাস্তায় এনে দাবি আদায় বিএনপির জন্য অতোটা সহজ হবে না,” বলছিলেন তিনি।যদিও এর মধ্যেই সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি পালনও শুরু করেছে বিএনপি।দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই অবশ্য বলছেন দশই ডিসেম্বরকে সফল করতে গিয়েও অনেক বড় আঘাত দলটিকে সইতে হয়েছে এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ অনেককে জেলে যেতে হয়েছে।এসব কারণে নির্বাচনের সময় আসা পর্যন্ত সংঘাতে না গিয়েই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে এগুতে চায় দলটি।
দলীয় নেতারা যা বলছেন
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন আন্দোলন একটি ধারাবাহিক কাজ এবং বিএনপি সেটি করছে আর এর ফলে সরকার আরও আগে থেকেই চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে বলে মনে করেন তিনি।“চাপে না পড়লে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই কেন বিএনপিকে টার্গেট করে কথা বলছেন। আর সরকার যাতে আরও চাপে পড়ে বিএনপি সেদিকেই যাচ্ছে,” বলছিলেন তিনি।অন্যদিকে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন আন্দোলন একটি পর্যায়ে এসেছে এবং এর ফলে এখন যে কেউ বিশ্বাস করে একটি সুন্দর নির্বাচন হলেই বিএনপি জনগণের রায় পাবে।“এটাই তো সরকারের জন্য বড় চাপ। শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে যাবো আমরা। বিভাগ, জেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি করছি। গত ডিসেম্বরে যা দেখেছেন তার চেয়ে আরও কঠিন পরিস্থিতি সরকারের জন্য তৈরি হবে সারাদেশে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলছেন ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে এক রাতেই মহাসচিবসহ প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে আটক করেছিলো সরকার এবং মামলা হয়েছে কয়েক হাজার।“কি পরিস্থিতিতে আমরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি সেটি সবাই বুঝতে পারে। কর্মসূচি চলতেই থাকবে। সরকার দাবি না মানলে তখন আন্দোলনের গতি প্রবাহ ভিন্ন দিকে যাবে। কিন্তু আমরা চাই সরকার শান্তিপূর্ণভাবেই দাবি মেনে নিক,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।একই সঙ্গে তিনি বলেন যে সরকার যতো নির্মম পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন রাজনৈতিক মোমেন্টাম কখন কোন দিকে মোড় নেয় সেটি সময় আসলেই বোঝা যাবে।প্রসঙ্গত, বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের নির্বাচনটিই নির্দলীয় সরকারের অধীনে চাইছে। দলের নেতারাও ইঙ্গিত করছেন যে ওই নির্বাচনের সময়েই বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের।অর্থাৎ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই দলটি তাদের আন্দোলনকে আরও জোরদার করবে এবং নির্বাচনের সময় যাতে নির্দলীয় সরকারের দাবি সরকার মেনে নেয় সেজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা তখনই চালাবে তারা।যদিও সরকারি দল আওয়ামী লীগ বরাবরই বলছেন নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনেই।