ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রফিনগর গ্রামের সাজ্জাতুলের বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর লুটপাঠসহ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন Logo বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত -নিহতদের স্মরণে দোয়ারাবাজারে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত Logo অন্তবর্তীকালীন সরকার পতনের ষড়যন্ত্র গোপন বৈঠকে থাকা ছাত্রলীগের ৩৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি Logo শান্তিগঞ্জে বিনামূল্যে গরু বিতরণের লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা ও প্রশিক্ষণ Logo দোয়ারাবাজারে সরকারি গাছ কর্তন।। জব্দ করলো প্রশাসন Logo শান্তিগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা  Logo ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে তাহিরপুরে’স্মরণ সভা’ Logo ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে শান্তিগঞ্জে ‘স্মরণ সভা’ Logo চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ বাম্পার ফলনে শান্তিগঞ্জের কৃষকের মুখে হাসি Logo জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅদ্ভুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে ছাতকে স্মরণ সভা

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ের দায় কার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা দেয়ার পরপরই আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে এর বিরোধিতা করেছিলাম। দেশের অনেকেই তখন হঠাৎ করে এরকম বৃত্তি পরীক্ষা না নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কারও মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। এর পরিণতি এবার দেখা যাচ্ছে ফলাফল প্রকাশের পর। প্রথম দফা ফলাফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই অভূতপূর্বভাবে ঘোষিত ফলাফল স্থগিত করা হয়। পরে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর অসংগতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও বালখিল্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী এমন শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পেয়েছে যারা আদৌ পরীক্ষায়ই অংশ নেয়নি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে দৃষ্টিকটুভাবে সকল শিক্ষার্থী বা অধিকাংশকেই বৃত্তি পেতে দেখা গেছে। প্রথম দফা ফলাফলে যারা বৃত্তি পেয়েছিলো সংশোধিত ফলাফলে তাদের অনেকেরই রোলনম্বর খোঁজে পাওয়া যায়নি। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না। এই বৃত্তি পরীক্ষাটি একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন তামাশা যারা করেছে তাদের কোনো বোধোদয় হয়েছে বলে দেখা যায় না। ভুল স্বীকার করার মতো কোনো খবরও আমরা পাইনি।
কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ফলাফল বিপর্যয় সম্পর্কে কেবল কারিগরি ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে। এমন যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। কারণ যে সিস্টেমে কারিগরি প্রক্রিয়া কার্যকর হয় তার পিছনে মানুষের হাত থাকে। ওই মানুষগুলো বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন, সরকারি সুবিধাভোগী ও যথেষ্ট ক্ষমতাবান। এরকম ব্যক্তিরা এমন ত্রুটিযুক্ত কারিগরি সিস্টেম তৈরি করে জাতীয়ভাবে গৃহীত একটি পাবলিক পরীক্ষাকে এমন নাজেহাল পরিস্থিতিতে ফেলে দিবেন তা কারও কাম্য নয়। এইসব ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রচলিত প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে এখন জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। ফলে সম্ভবত এই ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়টিও চাপা পড়ে যাবে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে যে দাগ লেগে গেল, তাদের যে পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে; তা কিছু দিয়েই দূর করা সম্ভব নয়।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সনে শ্রেণি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিলো। অটোপাস করে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২২ সনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হয়েছে। শহরাঞ্চলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, অভিভাবকদের সচেতনতা প্রভৃতি কারণে করোনা কালে শিক্ষার্থীদের কিছু পড়াশোনা হলেও গ্রামাঞ্চলে তা ছিলো বিপরীত। ২০২২ সনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিগত সময়ের ঘ্টাতি দূর করে উপযুক্ততা আনয়ন করাই প্রধান লক্ষ নির্ধারিত হওয়ার কথা ছিলো। দুই বছরে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তা দূর করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। এরকম এক সময়ে শিক্ষার্থীদের উপর অহেতুক একটি পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া ছিলো বোঝার উপর শাঁকের আঁটি চাপিয়ে দেয়ার নামান্তর। সরকার প্রাথমিক পর্যায়ের বৃত্তি পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হঠাৎ করে অদ্ভুতভাবে করোনার পর যখন কেবল শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলো তখন বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার কী এমন প্রয়োজন পড়ল? এর পিছনের খবর আমরা জানতে চাই।
এবছর ফলাফল নিয়ে যে তেলেসমাতি ঘটে গেল এর অবসান করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে। দরকার হলে প্রযুক্তির পরিবর্তে ম্যানুয়ালি পুরো পরীক্ষা পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আগে যেরকম এক উপজেলার উত্তরপত্র অন্য উপজেলার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ন করানো হত সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা যোগ্য শিক্ষার্থীদের মনোকষ্ট কিছুতেই দূর করা সম্ভব হবে না। যে সিস্টেমে পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পাওয়া যায় সেই সিস্টেম থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা যায় ততই মঙ্গল।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রফিনগর গ্রামের সাজ্জাতুলের বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর লুটপাঠসহ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ের দায় কার

আপডেট সময় ০৭:৪৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা দেয়ার পরপরই আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে এর বিরোধিতা করেছিলাম। দেশের অনেকেই তখন হঠাৎ করে এরকম বৃত্তি পরীক্ষা না নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কারও মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। এর পরিণতি এবার দেখা যাচ্ছে ফলাফল প্রকাশের পর। প্রথম দফা ফলাফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই অভূতপূর্বভাবে ঘোষিত ফলাফল স্থগিত করা হয়। পরে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর অসংগতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও বালখিল্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী এমন শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পেয়েছে যারা আদৌ পরীক্ষায়ই অংশ নেয়নি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে দৃষ্টিকটুভাবে সকল শিক্ষার্থী বা অধিকাংশকেই বৃত্তি পেতে দেখা গেছে। প্রথম দফা ফলাফলে যারা বৃত্তি পেয়েছিলো সংশোধিত ফলাফলে তাদের অনেকেরই রোলনম্বর খোঁজে পাওয়া যায়নি। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না। এই বৃত্তি পরীক্ষাটি একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন তামাশা যারা করেছে তাদের কোনো বোধোদয় হয়েছে বলে দেখা যায় না। ভুল স্বীকার করার মতো কোনো খবরও আমরা পাইনি।
কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ফলাফল বিপর্যয় সম্পর্কে কেবল কারিগরি ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে। এমন যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। কারণ যে সিস্টেমে কারিগরি প্রক্রিয়া কার্যকর হয় তার পিছনে মানুষের হাত থাকে। ওই মানুষগুলো বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন, সরকারি সুবিধাভোগী ও যথেষ্ট ক্ষমতাবান। এরকম ব্যক্তিরা এমন ত্রুটিযুক্ত কারিগরি সিস্টেম তৈরি করে জাতীয়ভাবে গৃহীত একটি পাবলিক পরীক্ষাকে এমন নাজেহাল পরিস্থিতিতে ফেলে দিবেন তা কারও কাম্য নয়। এইসব ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রচলিত প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে এখন জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। ফলে সম্ভবত এই ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়টিও চাপা পড়ে যাবে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে যে দাগ লেগে গেল, তাদের যে পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে; তা কিছু দিয়েই দূর করা সম্ভব নয়।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সনে শ্রেণি কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিলো। অটোপাস করে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২২ সনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হয়েছে। শহরাঞ্চলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, অভিভাবকদের সচেতনতা প্রভৃতি কারণে করোনা কালে শিক্ষার্থীদের কিছু পড়াশোনা হলেও গ্রামাঞ্চলে তা ছিলো বিপরীত। ২০২২ সনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিগত সময়ের ঘ্টাতি দূর করে উপযুক্ততা আনয়ন করাই প্রধান লক্ষ নির্ধারিত হওয়ার কথা ছিলো। দুই বছরে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তা দূর করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। এরকম এক সময়ে শিক্ষার্থীদের উপর অহেতুক একটি পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া ছিলো বোঝার উপর শাঁকের আঁটি চাপিয়ে দেয়ার নামান্তর। সরকার প্রাথমিক পর্যায়ের বৃত্তি পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হঠাৎ করে অদ্ভুতভাবে করোনার পর যখন কেবল শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলো তখন বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার কী এমন প্রয়োজন পড়ল? এর পিছনের খবর আমরা জানতে চাই।
এবছর ফলাফল নিয়ে যে তেলেসমাতি ঘটে গেল এর অবসান করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে। দরকার হলে প্রযুক্তির পরিবর্তে ম্যানুয়ালি পুরো পরীক্ষা পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আগে যেরকম এক উপজেলার উত্তরপত্র অন্য উপজেলার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ন করানো হত সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা যোগ্য শিক্ষার্থীদের মনোকষ্ট কিছুতেই দূর করা সম্ভব হবে না। যে সিস্টেমে পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পাওয়া যায় সেই সিস্টেম থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা যায় ততই মঙ্গল।