ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo শান্তিগঞ্জে জমজমাট ফুটবল প্রীতি ম্যাচ: ট্রাইবেকারে জয় পায় পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন Logo সুনামগঞ্জ-৩ আসনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা সোহেল আহমদ Logo সুনামগঞ্জে এনসিপির নেতৃত্বে হাছন রাজার বংশধর Logo পাথারিয়া ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত Logo ঢাকা জামায়াতের মহাসমাবেশ উপলক্ষে পাথারিয়া ইউপি জামায়াতের প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন Logo শান্তিগঞ্জের সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে হতাশাজনক এসএসসি ফলাফল পাশের হার মাত্র ৬০.১২%, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে চরম অসন্তোষ Logo সিলেটে পাসের হার ৬৮.৫৭, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬১৪ জন Logo এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫, কমেছে জিপিএ-৫ Logo জলঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে জামায়াতের মতবিনিময় Logo ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

কলেজছাত্রী হামিদার দেড় টন ওজনের মানিকের দৈনিক খরচ ১৫০০

এবারের ঈদেও দেড় টন ওজনের ষাঁড় ‘মানিক’কে বিক্রির আশা করছেন খামারি হামিদা। এর আগে তিনবার হাটে ওঠালেও বিক্রি না হওয়ায় অনেকটাই হতাশ হামিদা। তবে হাল ছাড়েননি। ন্যায্যমূল্যে বিক্রির আশায় মানিককে লালন পালন করছেন তিনি। ষাঁড়টি বিক্রি করে দুগ্ধ খামার করার স্বপ্ন আছে তার।

টাঙ্গাইল সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাসে অর্নাস পাস করা হামিদা আক্তার টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউহাটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের মেয়ে। দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করে এরইমধ্যে বড় করে তুলেছেন ছয় বছর বয়সী বিশালাকৃতির ষাঁড় মানিককে। পরিবারের সদস্যের মতোই বড় হচ্ছে তার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরুগুলো।

গরুগুলোর থাকার ঘরে রয়েছে দুটি সিলিং ফ্যান ও মশারি। নিয়মিত খাবারের তালিকায় রয়েছে খড়, ভুষি, কাঁচা ঘাস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা, মিষ্টিকুমড়া ও মিষ্টি আলু। রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তাদের সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। মানিকের খাবার ও লালনপালনের জন্য প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো খরচ হয় হামিদার।

হামিদ-রিনা দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে বড় হামিদা। উপার্জনের টাকায় নিজের ও দুই বোনের লেখাপড়ার ব্যয়বহনসহ কৃষক বাবার সংসারের হালও ধরেছেন তিনি। এরইমধ্যে ছোট দুই বোনকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করিয়েছেন। এক বোনের বিয়ে দিয়ে আরেক বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন নার্সিংয়ে।

ভিটেবাড়িসহ বাবার জমি পরিমাণ মাত্র ৫০ শতাংশ। বাবার পক্ষে সংসারের এত খরচ বহন অসম্ভব হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন দর্জির কাজ। এরপর গত ৬ বছর যাবৎ করছেন গরু, রাজহাঁস ও কবুতর লালনপালনসহ বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা। তার ব্যবসার ঠিকানা হিসেবে এক বছর হলো বাড়ির সামনে বসিয়েছেন একটি মুদি দোকান। সেই দোকানেই নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য বিক্রির পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন বিকাশ এজেন্ট, ফ্লাক্সিলোড আর দর্জির কাজ। যার আয় থেকেই চলছে তাদের লেখাপড়াসহ সংসারের খরচ।

এর মধ্যে মানিকের জন্য দৈনিক খাবার লাগছে ১৭ কেজি গমের ভুষি, ৪ কেজি ছোলা, ২ কেজি খুদের ভাত, আধা কেজি সরিষার খৈল। এছাড়াও দৈনিক তাকে খাওয়ানো হচ্ছে নানা জাতের পাকা কলা। মানিকের পিছনে দৈনিক এত খরচ যোগানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে হামিদার পক্ষে।

হামিদা বলেন, বর্তমানে মানিকের ওজন দেড় টন। ৬ বছর আগে তার খামারের ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গাভী থেকেই জন্ম নেয় মানিক ও রতন নামের দুটি ষাঁড় বাছুর। গত কোরবানির হাটে ষাঁড় দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেসময়ই মানিকের ওজন ছিল ৩৫ মণ আর রতনের ওজন ছিল ৩৪ মণ। দাম চেয়েছিলেন মানিকের ১৪ আর রতনের ১৩ লাখ।

কিন্তু সেবার বাড়িতে গরু ব্যবসায়ীরা এসে মানিকের দাম বলেছিলেন ৯ লাখ টাকা। এরওপর বাকিতে নেওয়ার কথা বলায় মানিককে আর বিক্রি করা হয়নি। পরে ঢাকার গাবতলী হাটে নেওয়া হয় মানিক ও রতনকে। তবে করোনার কারণে হাটে নিয়েও সুবিধা হয়নি। মাত্র ৪ লাখ টাকায় রতনকে বিক্রি করা হলেও মানিককে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

হামিদা আরও বলেন, এবার আমরা বাড়ি থেকেই ষাঁড়টি বিক্রির চেষ্টা করছি। বাড়িতে এসে যদি কোনো ক্রেতা ন্যায্য দাম বলেন, তাহলে আমরা নিজ খরচে মানিককে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেবো। আশা করছি এ বছর ভালো দামে মানিককে বিক্রি করতে পারবো।

ষাঁড়টি দেখতে আসা নাগরপুরের দর্শনার্থী নয়ন ও মুরাদ বলেন, এত বড় ষাঁড় এর আগে কখনো দেখিনি। এত বড় ষাঁড় জেলায় আর দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না।

লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বুদ্দু বলেন, কলেজছাত্রী হামিদা অনেক কষ্ট করে ষাঁড়টি লালন-পালন করেছে। দুই বছর যাবৎ বিক্রির চেষ্টা করলেও ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেনি। দোয়া করি ভালো দামে এবার ষাঁড় বিক্রি হোক।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, এ বছরের প্রাণিসম্পদ মেলায় গরুটির জন্য উদ্যোক্তা হামিদাকে আমরা প্রথম পুরস্কার দিয়েছি। জেলায় এত বড় গরুর ক্রেতা কম। ষাঁড়টিকে ঢাকার কোরবানির হাটে উঠিয়ে বিক্রির জন্য চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ষাঁড়টি বেঙ্গল মিট কোম্পানির কাছে কেজি দরে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে হামিদা তাতে রাজি হননি। এবারও হামিদার ষাঁড়টি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছেন তারা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

শান্তিগঞ্জে জমজমাট ফুটবল প্রীতি ম্যাচ: ট্রাইবেকারে জয় পায় পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন

কলেজছাত্রী হামিদার দেড় টন ওজনের মানিকের দৈনিক খরচ ১৫০০

আপডেট সময় ০৬:৪৬:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

এবারের ঈদেও দেড় টন ওজনের ষাঁড় ‘মানিক’কে বিক্রির আশা করছেন খামারি হামিদা। এর আগে তিনবার হাটে ওঠালেও বিক্রি না হওয়ায় অনেকটাই হতাশ হামিদা। তবে হাল ছাড়েননি। ন্যায্যমূল্যে বিক্রির আশায় মানিককে লালন পালন করছেন তিনি। ষাঁড়টি বিক্রি করে দুগ্ধ খামার করার স্বপ্ন আছে তার।

টাঙ্গাইল সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাসে অর্নাস পাস করা হামিদা আক্তার টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউহাটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের মেয়ে। দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করে এরইমধ্যে বড় করে তুলেছেন ছয় বছর বয়সী বিশালাকৃতির ষাঁড় মানিককে। পরিবারের সদস্যের মতোই বড় হচ্ছে তার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরুগুলো।

গরুগুলোর থাকার ঘরে রয়েছে দুটি সিলিং ফ্যান ও মশারি। নিয়মিত খাবারের তালিকায় রয়েছে খড়, ভুষি, কাঁচা ঘাস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা, মিষ্টিকুমড়া ও মিষ্টি আলু। রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তাদের সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। মানিকের খাবার ও লালনপালনের জন্য প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো খরচ হয় হামিদার।

হামিদ-রিনা দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে বড় হামিদা। উপার্জনের টাকায় নিজের ও দুই বোনের লেখাপড়ার ব্যয়বহনসহ কৃষক বাবার সংসারের হালও ধরেছেন তিনি। এরইমধ্যে ছোট দুই বোনকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করিয়েছেন। এক বোনের বিয়ে দিয়ে আরেক বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন নার্সিংয়ে।

ভিটেবাড়িসহ বাবার জমি পরিমাণ মাত্র ৫০ শতাংশ। বাবার পক্ষে সংসারের এত খরচ বহন অসম্ভব হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন দর্জির কাজ। এরপর গত ৬ বছর যাবৎ করছেন গরু, রাজহাঁস ও কবুতর লালনপালনসহ বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা। তার ব্যবসার ঠিকানা হিসেবে এক বছর হলো বাড়ির সামনে বসিয়েছেন একটি মুদি দোকান। সেই দোকানেই নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য বিক্রির পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন বিকাশ এজেন্ট, ফ্লাক্সিলোড আর দর্জির কাজ। যার আয় থেকেই চলছে তাদের লেখাপড়াসহ সংসারের খরচ।

এর মধ্যে মানিকের জন্য দৈনিক খাবার লাগছে ১৭ কেজি গমের ভুষি, ৪ কেজি ছোলা, ২ কেজি খুদের ভাত, আধা কেজি সরিষার খৈল। এছাড়াও দৈনিক তাকে খাওয়ানো হচ্ছে নানা জাতের পাকা কলা। মানিকের পিছনে দৈনিক এত খরচ যোগানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে হামিদার পক্ষে।

হামিদা বলেন, বর্তমানে মানিকের ওজন দেড় টন। ৬ বছর আগে তার খামারের ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গাভী থেকেই জন্ম নেয় মানিক ও রতন নামের দুটি ষাঁড় বাছুর। গত কোরবানির হাটে ষাঁড় দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেসময়ই মানিকের ওজন ছিল ৩৫ মণ আর রতনের ওজন ছিল ৩৪ মণ। দাম চেয়েছিলেন মানিকের ১৪ আর রতনের ১৩ লাখ।

কিন্তু সেবার বাড়িতে গরু ব্যবসায়ীরা এসে মানিকের দাম বলেছিলেন ৯ লাখ টাকা। এরওপর বাকিতে নেওয়ার কথা বলায় মানিককে আর বিক্রি করা হয়নি। পরে ঢাকার গাবতলী হাটে নেওয়া হয় মানিক ও রতনকে। তবে করোনার কারণে হাটে নিয়েও সুবিধা হয়নি। মাত্র ৪ লাখ টাকায় রতনকে বিক্রি করা হলেও মানিককে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

হামিদা আরও বলেন, এবার আমরা বাড়ি থেকেই ষাঁড়টি বিক্রির চেষ্টা করছি। বাড়িতে এসে যদি কোনো ক্রেতা ন্যায্য দাম বলেন, তাহলে আমরা নিজ খরচে মানিককে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেবো। আশা করছি এ বছর ভালো দামে মানিককে বিক্রি করতে পারবো।

ষাঁড়টি দেখতে আসা নাগরপুরের দর্শনার্থী নয়ন ও মুরাদ বলেন, এত বড় ষাঁড় এর আগে কখনো দেখিনি। এত বড় ষাঁড় জেলায় আর দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না।

লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বুদ্দু বলেন, কলেজছাত্রী হামিদা অনেক কষ্ট করে ষাঁড়টি লালন-পালন করেছে। দুই বছর যাবৎ বিক্রির চেষ্টা করলেও ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেনি। দোয়া করি ভালো দামে এবার ষাঁড় বিক্রি হোক।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, এ বছরের প্রাণিসম্পদ মেলায় গরুটির জন্য উদ্যোক্তা হামিদাকে আমরা প্রথম পুরস্কার দিয়েছি। জেলায় এত বড় গরুর ক্রেতা কম। ষাঁড়টিকে ঢাকার কোরবানির হাটে উঠিয়ে বিক্রির জন্য চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ষাঁড়টি বেঙ্গল মিট কোম্পানির কাছে কেজি দরে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে হামিদা তাতে রাজি হননি। এবারও হামিদার ষাঁড়টি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছেন তারা।