গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে এক সময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারও দখল করেছে এ ফল। লটকনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এখানকার কৃষক। ঘুচে যাচ্ছে বেকারত্বের গ্লানিও।
কৃষি অফিসও বলছে, কম খরচ ও কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতি বছর এ ফল চাষে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বরাইয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মো. আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া নামে এক কৃষকের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন। টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে হলুদ রঙে পরিপক্ব হয়েছে সুস্বাদু এ ফল। ভিটামিন-সি, প্রোটিন ও ক্যালরি যুক্ত মুখরোচক এ ফল পেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক আতিকুল্লাহ। বাজারজাতকরণের আগ মুহূর্তে নানা পদ্ধতিতে পোকামাকড় দূর করছেন।
একই চিত্র দেখা যায় উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও, জামালপুর ইউনিয়নের গোল্লারটেক, নাগরী ইউনিয়নের নগরভেলা ও সেনপাড়া গ্রামে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জের নাগরী, জাঙ্গালীয়া, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করছে চাষিরা। তবে কম খরচে, কম সময়ে ভালো ফলন ও অধিক লাভ হওয়ায় প্রতি বছর এ ফল আবাদে দিন দিন চাষির সংখ্যাও বাড়ছে। গেলো বছর উপজেলার ১৯ হেক্টর জমিতে ১১৪ টন লটকন উৎপাদন হয়েছে। তবে চলতি বছর এর ফলন বাড়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ১ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ এলাকার লটকন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলার বড়গাঁও ভিটিপাড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব লটকন চাষি মোবারক হোসেন বলেন, আমার বাগানে ১২০টির মতো লটকন গাছ আছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলনও খুব ভালো হয়েছে। লটকন ছায়ার মধ্যে হয়। খরচ কম হয়। ফুল আসার সঙ্গে একটু পানি ব্যবহার করতে হয়। লটকন গাছে থাকা অবস্থায় স্থানীয় পাইকাররা চাষিদের কাছ থেকে বাগান কিনে নেয়।
একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমি নিজেও লটকন বাগান করেছি। আশপাশের অনেকেই এ ফলটির চাষ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে লটকন চাষ করে আলহামদুলিল্লাহ আমি বেশ লাভবান।
ওই গ্রামের বেকার যুবক বিজয় দত্ত (২৮) বলেন, কম সময় ও কম পুঁজিতে লটকন চাষ করা হয়। এ ফল চাষে সহজেই বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। আমি নিজেও এক সময় বেকার ছিলাম। পরে লটকন চাষ করে নিজের বেকারত্ব দূর করেছি।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লটকন চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সঠিক পরিচর্যা ও সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে এবার লটকনের ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে চাষিদের চারা বিতরণ, রোপণ, পরিচর্যা ও রোগবালাই নিরসনে নানা পরামর্শসহ কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জাগো নিউজকে বলেন, একটা সময় বসতবাড়িতে লটকন চাষ হত। তবে এর চাহিদা থাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এ ফল চাষ করছেন কৃষকরা। তাই বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি লটকন দেশের বিভিন্ন বাজার ও স্থানীয় বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফলটির বহুমুখী ব্যবহার করা যেতে পারলে আরও অর্থ আয় করা যেতে পারে।