কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমনসহ ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও দুই সাংবাদিকসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর ১২টায় গুরুদয়াল কলেজ মাঠ থেকে জেলা বিএনপির ব্যানারে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা বের হয়। শহরের আখড়া বাজার হয়ে ঈশা খাঁ রোডের রথখলা এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দিলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
আধা ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম ও চ্যানেল২৪ এর জেলা প্রতিনিধি খাইরুল আলম ফয়সাল আহত হন।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন জানান, তিনিসহ প্রায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের পল্লী উন্নয়ন সমবায় সম্পাদক মাহামুদুল হাসান হিমেল, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ শাহীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা তাজবির, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জমান পার্নেল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আল মোর্তুজা আল কামাল মোস্তাক, পল্লী ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা তান্না, জেলা যুবদলের সদস্য সবুজ ভূইয়া, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, পাকুন্দিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জজ মিয়া রয়েছেন।
এছাড়াও জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন, অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শহিদুল হক শহীদ, যুবদল নেতা নাঈম মিয়া, আল আমিন আহত হয়েছেন। তারা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী সার্জন (ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার) ডা. আনন্দ বসাক বলেন, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ছয়জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলা হয়েছে।
জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নিশাদ বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি আমাদের ছাত্রদলের ৬৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাছাড়াও আমরা ধারণা করছি আহতের সংখ্যা ১০০ জনের মতো হবে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বাপ্পি, বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইফতেকার হায়দার ইফতি, মিঠামইন উপজেলা ছাত্রদল নেতা তরিক মোমেন, সদর থানা ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক রাফিউল ইসলাম নওসাদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাজারুল ইসলাম উজ্জ্বল ও জেলা ছাত্রদল নেতা হৃদয়।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। পদযাত্রাটি রথখলা এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আটকের ব্যাপারে এখনো জানা যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অর্থ) মোস্তাক সরকার জানান, বিএনপির পদযাত্রাটি গুরুদয়াল কলেজ থেকে বের হয়ে শহরের রথখলা এলাকায় এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তারা রখখলা এলাকায় পৌঁছালে পূর্ব নির্ধারিত রথখলা মাঠে বিএপির নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে বলা হয়। এ সময় বিনা উসকানিতে পুলিশের উপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল মিয়া জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো মামলাও রুজু হয়নি।