ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের আইনি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে ২০২৫ সালের রোববার (৪ মে) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকার ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মনির তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, ব্যারিস্টার রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরেই প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন এবং সম্প্রতি অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
১৯৪৪ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রির পর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং ১৯৮০ সালে লিংকনস ইন থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার পর তিনি দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আইনি পেশায় তাঁর পথচলা ছিল দীর্ঘ ও মর্যাদাপূর্ণ। ১৯৮৮ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবীর মর্যাদা লাভ করেন। তিনি “দ্য ল’ কাউন্সেল” নামক একটি স্বনামধন্য আইনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯০ সালে, যা আজও আইনজীবীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের রাজনৈতিক জীবনও ছিল আলোচিত। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। তবে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সেখান থেকেই ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন।
জামায়াত ছাড়ার পর তিনি নতুন রাজনৈতিক দল “আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি”-তে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন। রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমি একজন কোর্টরুম ব্যারিস্টার। আইন ও আইনের শাসনের মাধ্যমেই দেশ ও জাতির খেদমত করতে চাই।”
২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থানের পর তিনি দেশে ফিরে আবারো সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় সক্রিয় হন। ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাঁর সম্মানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুধু একজন আইনজীবীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক নির্ভীক চিন্তাবিদ ও নীতিনিষ্ঠ পেশাজীবী, যিনি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অটল ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর দুই ছেলে—ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী এবং ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী—সুপ্রিম কোর্টে পিতার পথ অনুসরণ করে আইন পেশায় যুক্ত রয়েছেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা আজ রোববার রাতে ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে এবং ৫ মে সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।