পাইকারি পর্যায়ে ঘোষণার পর পরই গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। বেশিরভাগ কোম্পানিই ২০ শতাংশ দাম বাড়াতে চায়। ইতিমধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজোপাডিকো ও নেসকো। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তা গ্রহণ করে এ বিষয়ে গণশুনানির জন্য আগামী ৮ ও ৯ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারিতে যেহেতু বিদ্যুতের দাম বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে না বাড়ার কোনো যুক্তি নেই। দাম বাড়বেই, কতটা বাড়ে সেটাই এখন দেখার বিষয়। সাধারণত সরবরাহ করা বিদ্যুতের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব কমে গেছে। পাইকারি দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কম উৎপাদনকে সামনে এনে বেশি করে দাম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না বিইআরসির। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তারা পাইকারি দামে বিদ্যুৎ কিনে তা গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করে।
যেহেতু পাইকারিতে দাম বেড়েছে তাই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ গ্রাহকের কাছে খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রি করে সেই লাভের টাকায় তাদের কোম্পানি পরিচালিত হয়। তারা চান পাইকারিতে যে হারে দাম বাড়ানো হয়েছে সেই হারে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হোক। সে অনুযায়ী আবেদন করা হয়েছে। এখন বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেবে।
বিইআরসি বলছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। তাদের সরবরাহ করা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গণশুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরবরাহ করা তথ্যে যদি দেখা যায়, দাম না বাড়ালেও কোম্পানিগুলোর কোনো লস হচ্ছে না তাহলে দাম বাড়ানো হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি থেকে সরে আসতে চাইছে। সেজন্য গ্যাস, তেল ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী ডিজেল পেট্রোল ও অকটেন বেসরকারি খাতে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইকারিতে দাম বাড়ানো হবে না এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও সরকারের গ্রিন সিগন্যালের কারণে দেড় মাস পর দাম বাড়ানো হয়েছে। এখনও সরকারের গ্রিন সিগন্যাল নিয়েই কোম্পানিগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। ৮ ও ৯ জানুয়ারি গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানাবে বিইআরসি।
বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে গ্রাহক পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির লিখিত আবেদন করেছে পিডিবি। এ ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানি চায় ২০ শতাংশ দাম বাড়ানো হোক।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) পরিচালক বিকাশ দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, পাইকারি বাজারে বিদ্যুতের দর বৃদ্ধির প্রভাব গ্রাহক পর্যায়ে পড়েছে। আমরা ডিপিডিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সব কাগজপত্র জমা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছি। কতটুকু বাড়ানো হবে সেই সিদ্ধান্ত দেবে বিইআরসি।
ডেসকো পরিচালক কাওসার আমির আলি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রতি মাসে কোম্পানি পরিচালন ব্যয় ৮০ কোটি টাকা। পাইকারিতে দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন খুচরা পর্যায়ে দাম না বাড়ালে কোম্পানি পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে যাবে। আমরা পাইকারি কিনে গ্রাহকের কাছে খুচরা বিক্রি করি। বেশি দামে কিনে কম দামে তো বিক্রি করা সম্ভব নয়।
বিইআরসির গণশুনানি ‘প্রহসন’ উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আনু মুহাম্মদ বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়বে, আর সেটা গ্রাহক পর্যায়ে বাড়বে না, সেটা তো হয় না। পাইকারিতে দাম বাড়লে সেটার প্রভাব গ্রাহকের ওপর পড়বেই।
বিইআরসি সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী গণমাধ্যমকে বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। বিইআরসি সবসময় জনগণের পক্ষে। গণশুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে।
প্রসঙ্গত, পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নাকচ করে দিলেও দেড় মাসের মাথায় দাম ১৯ দশমিক ৯২ ভাগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। এতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ২০২০ সালে পাইকারি পর্যায়ে পিডিবির কাছ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা করে কিনতে হতো। এ দফায় ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দর বৃদ্ধির কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ কিনতে হবে ১ টাকা তিন পয়সা থেকে ১ টাকা ২৭ পয়সা বেশি দরে।