ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। Logo শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা Logo জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন Logo পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা Logo হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান Logo জগন্নাথপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo মাটিয়াইন ও টাঙুয়ার হাওর পরিদর্শন….. আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা Logo ২০২৫–২৬ সেশনের জন্য ২নং পাটলী ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটি ঘোষণা।

২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এ বছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।রমজান মাসে বাজারে তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।তবে পণ্যের বাজারে কোন ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও, ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে পণ্যের দাম বাড়ায় যাতে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়।পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বাজারে বর্তমানে ছোলাসহ সব ধরনের ডাল, খেজুর এবং চিনির ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এরইমধ্যে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।

কোন পণ্যের কেমন দাম?

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এরইমধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোও রয়েছে। যদিও রমজান মাস শুরু হতে আরো দেড় মাসের মতো বাকি রয়েছে।রাজধানীর নুরেরচালা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী নূরে আলম নয়ন বলেন, বিভিন্ন মানের ছোলা ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগের তুলনায় ছোলায় কেজিতে ১০-১৫ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান তিনি।খেজুরের ক্ষেত্রে মান ভেদে দাম, অনেক ক্ষেত্রে, দ্বিগুন হয়েছে বলে জানান মি. আলম।তিনি বলেন, “আগে যেটা আপনার ৫০০-৬০০ টাকায় আনা যাইতো, অইটা এখন ৮০০-৯০০ টাকা লাগে। এক হাজার টাকাও লাগে কোন জায়গায়।”এছাড়া বিভিন্ন রকমের ডালের দাম বেড়েছে। অ্যাংকার(এক ধরনের ডাল), খেসারি- এসব ডালের দাম বেড়েছে। মসুরের ডাল কেজি প্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছে।খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ১৮ তারিখে শবে-মেরাজের পর সব ধরনের ডাল এবং ছোলার দাম আরো বেড়ে যাবে।চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ভাল মানের ছোলা, যেটা গত বছর প্রতি মণ তিন হাজার টাকা করে ছিলো, সেটি এবার বেড়ে ৩৬০০ টাকা হয়েছে।তবে রোজার সময় ছোলার দাম আরো বেশি বাড়বে বলে জানান তিনি।মসুরের ডাল মান ভেদে ৮৮ টাকা থেকে শুরু করে ১৩২ টাকা কেজি করে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কিছু কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় চিনির দামের কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন চিনির দাম ৫২০ ডলার করে। এক মাস আগেও এই দাম ৪৪০ ডলার করে ছিল।এই দামে চিনি আমদানির পর, এর সাথে পরিশোধন ব্যয়সহ আরো কিছু ব্যয় যুক্ত হয়ে এর দাম বাড়বে বলে জানানো হয়।

ঘাটতি আছে?

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি থাকার কারণে এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কমে গেছে, যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম।চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। এই সময়ে এই পণ্যটি গতবারের তুলনায় ৩১% কম আমদানি করা হয়েছে।একই সময়ে চিনি আমদানি করা হয়েছিলো চার লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টনের মতো। আর এ বছর চিনি আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন।২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার টন। আর চলতি বছর এই সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। যা গতবছর একই সময়ে তুলনায় ৭১ শতাংশ কম।তবে এই সময়ে পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্য বলছে যে, ২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টন পাম অয়েল ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ সালে একই সময়ে এটির আমদানি বেড়েছে এবং প্রায় মোট ১২ লাখ মেট্রিক টন পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। এখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭.৪৪%।তবে আমদানিকারকরা বলছেন যে, কাস্টমসের এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয় বলে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।নিত্যপণ্য আমদানি করে এমন একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, “একচুয়াল রিপোর্টটা কিন্তু আমরা পাই না।”মি. চৌধুরী মনে করেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খুলতে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। অনেক ব্যাংকের অনীহা রয়েছে, তাদের ডলারের সংকট রয়েছে, তারা মার্জিন বেশি চাচ্ছে, কমিশন বেশি চাচ্ছে, যার কারণে প্রয়োজন মাফিক এলসি খোলা না যাওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।এরপরও বাজারে রমজানের পণ্য আমদানির সময় এখনো রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।তবে রমজানের আগে যেহেতু অনেক সময় হাতে নেই তাই যেসব পণ্য প্রতিবেশি দেশ বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সম্ভব, সেগুলো রমজানের আগেই আমদানি করা সম্ভব। আর যেগুলো দূরের দেশ থেকে আসবে সেগুলো আসতে আসতে রমজান মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ব্যবসায়ীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পণ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রচার করে থাকে যাতে অস্থিতিশীল করা যায়। বাজারে কোন পণ্যের আসলে ঘাটতি নেই।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রোজায় খেজুরের চাহিদা রয়েছে ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে টিসিবিরই রয়েছে ১০ হাজার টন।ছোলা আর খেজুর পর্যাপ্ত পরিমাণে রমজানের আগেই বাজারে চলে আসবে। এগুলো এখন পথে রয়েছে।তেল এখন যেটা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আরো আড়াই মাস চালানো যাবে। চিনিরও একই অবস্থা বলে জানাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

কী পদক্ষেপ নেয়া হবে?

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে যে, এরইমধ্যে এফবিসিসিআই-তে সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক হয়েছে।রোজার বিষয়টি মাথায় রেখে আরো দুই মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করা হয়েছে।রোজা শুরু হওয়ার আগেই বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে।বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।সংস্থাটি বলছে, যতগুলো পর্যায়ে পণ্য হাত বদল হয় তার কোন পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুদ না হয় তা নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তথ্য নিয়ে এ কাজটি করা হচ্ছে।বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয় তাই মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে দরকার হলে তাদের সেই অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে।“এবার তাদেরকে আমরা এংগেজ করবো, তাদেরকে চাপে রাখবো।”তার মতে, বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে সেই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুদ করা সম্ভব হবে না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।

২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

আপডেট সময় ০৯:১৪:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এ বছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।রমজান মাসে বাজারে তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।তবে পণ্যের বাজারে কোন ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও, ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে পণ্যের দাম বাড়ায় যাতে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়।পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বাজারে বর্তমানে ছোলাসহ সব ধরনের ডাল, খেজুর এবং চিনির ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এরইমধ্যে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।

কোন পণ্যের কেমন দাম?

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এরইমধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোও রয়েছে। যদিও রমজান মাস শুরু হতে আরো দেড় মাসের মতো বাকি রয়েছে।রাজধানীর নুরেরচালা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী নূরে আলম নয়ন বলেন, বিভিন্ন মানের ছোলা ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগের তুলনায় ছোলায় কেজিতে ১০-১৫ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান তিনি।খেজুরের ক্ষেত্রে মান ভেদে দাম, অনেক ক্ষেত্রে, দ্বিগুন হয়েছে বলে জানান মি. আলম।তিনি বলেন, “আগে যেটা আপনার ৫০০-৬০০ টাকায় আনা যাইতো, অইটা এখন ৮০০-৯০০ টাকা লাগে। এক হাজার টাকাও লাগে কোন জায়গায়।”এছাড়া বিভিন্ন রকমের ডালের দাম বেড়েছে। অ্যাংকার(এক ধরনের ডাল), খেসারি- এসব ডালের দাম বেড়েছে। মসুরের ডাল কেজি প্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছে।খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ১৮ তারিখে শবে-মেরাজের পর সব ধরনের ডাল এবং ছোলার দাম আরো বেড়ে যাবে।চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ভাল মানের ছোলা, যেটা গত বছর প্রতি মণ তিন হাজার টাকা করে ছিলো, সেটি এবার বেড়ে ৩৬০০ টাকা হয়েছে।তবে রোজার সময় ছোলার দাম আরো বেশি বাড়বে বলে জানান তিনি।মসুরের ডাল মান ভেদে ৮৮ টাকা থেকে শুরু করে ১৩২ টাকা কেজি করে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কিছু কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় চিনির দামের কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন চিনির দাম ৫২০ ডলার করে। এক মাস আগেও এই দাম ৪৪০ ডলার করে ছিল।এই দামে চিনি আমদানির পর, এর সাথে পরিশোধন ব্যয়সহ আরো কিছু ব্যয় যুক্ত হয়ে এর দাম বাড়বে বলে জানানো হয়।

ঘাটতি আছে?

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি থাকার কারণে এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কমে গেছে, যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম।চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। এই সময়ে এই পণ্যটি গতবারের তুলনায় ৩১% কম আমদানি করা হয়েছে।একই সময়ে চিনি আমদানি করা হয়েছিলো চার লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টনের মতো। আর এ বছর চিনি আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন।২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার টন। আর চলতি বছর এই সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। যা গতবছর একই সময়ে তুলনায় ৭১ শতাংশ কম।তবে এই সময়ে পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্য বলছে যে, ২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টন পাম অয়েল ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ সালে একই সময়ে এটির আমদানি বেড়েছে এবং প্রায় মোট ১২ লাখ মেট্রিক টন পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। এখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭.৪৪%।তবে আমদানিকারকরা বলছেন যে, কাস্টমসের এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয় বলে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।নিত্যপণ্য আমদানি করে এমন একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, “একচুয়াল রিপোর্টটা কিন্তু আমরা পাই না।”মি. চৌধুরী মনে করেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খুলতে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। অনেক ব্যাংকের অনীহা রয়েছে, তাদের ডলারের সংকট রয়েছে, তারা মার্জিন বেশি চাচ্ছে, কমিশন বেশি চাচ্ছে, যার কারণে প্রয়োজন মাফিক এলসি খোলা না যাওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।এরপরও বাজারে রমজানের পণ্য আমদানির সময় এখনো রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।তবে রমজানের আগে যেহেতু অনেক সময় হাতে নেই তাই যেসব পণ্য প্রতিবেশি দেশ বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সম্ভব, সেগুলো রমজানের আগেই আমদানি করা সম্ভব। আর যেগুলো দূরের দেশ থেকে আসবে সেগুলো আসতে আসতে রমজান মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ব্যবসায়ীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পণ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রচার করে থাকে যাতে অস্থিতিশীল করা যায়। বাজারে কোন পণ্যের আসলে ঘাটতি নেই।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রোজায় খেজুরের চাহিদা রয়েছে ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে টিসিবিরই রয়েছে ১০ হাজার টন।ছোলা আর খেজুর পর্যাপ্ত পরিমাণে রমজানের আগেই বাজারে চলে আসবে। এগুলো এখন পথে রয়েছে।তেল এখন যেটা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আরো আড়াই মাস চালানো যাবে। চিনিরও একই অবস্থা বলে জানাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

কী পদক্ষেপ নেয়া হবে?

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে যে, এরইমধ্যে এফবিসিসিআই-তে সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক হয়েছে।রোজার বিষয়টি মাথায় রেখে আরো দুই মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করা হয়েছে।রোজা শুরু হওয়ার আগেই বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে।বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।সংস্থাটি বলছে, যতগুলো পর্যায়ে পণ্য হাত বদল হয় তার কোন পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুদ না হয় তা নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তথ্য নিয়ে এ কাজটি করা হচ্ছে।বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয় তাই মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে দরকার হলে তাদের সেই অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে।“এবার তাদেরকে আমরা এংগেজ করবো, তাদেরকে চাপে রাখবো।”তার মতে, বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে সেই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুদ করা সম্ভব হবে না।