প্রয়োজন মত গ্রহণ করা যায় এবং হরমোনের সাথে সম্পর্কহীন, পুরুষের জন্য এমন একটি জন্মনিরোধক পিল তৈরির সম্ভাবনাকে এখন বাস্তব বলে বর্ণনা করছেন বিজ্ঞানীরা।বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এমন একটি উদ্ভাবনের খুব কাছাকাছি রয়েছেন, যা শুক্রাণুর সাঁতার আটকে দিতে সক্ষম হবে।ইঁদুরের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, শুক্রাণুকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্তব্ধ করে রাখতে পারে এই পিল, এবং ডিম্বাশয়ের কাছে পৌঁছানোর আগে শুক্রাণুর কার্যকারিতা ঠেকাতে ওই সময়টুকু যথেষ্ঠ।তবে মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর আগে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা।এবং ইঁদুরের পর খরগোশের ওপর এর পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।এ উদ্ভাবনের মূল ধারণাটি হচ্ছে, যৌনমিলনের এক ঘন্টা আগে ব্যবহারকারী পিলটি গ্রহণ করবেন এবং ঠিক এক ঘণ্টা পরই সঙ্গীর সাথে একান্ত সময় কাটানোর মূহুর্তটি শুরু হবে।
নারীদের জন্মনিরোধক পিল যেমন হরমোনের সাথে সম্পর্কিত, এটি তেমন নয়।বিজ্ঞানীরা বলছেন পুরুষদের জন্য আবিষ্কার করা এই পিলের সাথে হরমোনের কোনও সম্পৃক্ততা থাকবে না।বিজ্ঞানীরা এই পিলের ক্ষেত্রে একে একটা বড় ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন।এটা টেস্টোস্টেরনে কোনও প্রভাব ফেলবে না এবং এটি ব্যবহারে পুরুষের হরমোন ঘাটতিজনিত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না।বরং বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ‘শুক্রাণু-সাঁতার’ কাটার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় যে নির্দিষ্ট কোষের মাধ্যমে সেটি একটি সেলুলার সিগন্যালিং প্রোটিন।আর পরীক্ষা চালানো এই পিলটির কাজ হবে সেই প্রেটিনকে বাধা দেয়া।ইউএস ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অফ হেলথের অর্থায়নে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানোর প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সেটি নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে ছাপা হয়।দেখা গেছে, এই ওষুধের এক ডোজ ব্যবহারের ফলে ইঁদুরের যৌনকর্ম চলাকালীন এবং তার আগে ও পরে শুক্রাণুর নড়াচড়া থেমে যায়।তিন ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে শরীরে।পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন শুক্রাণু প্রবাহে শরীরে পিলের কার্যকারিতা আর থাকে না।গবেষক দলে সদস্য নিউ ইয়র্কের উইল কর্নেল মেডিসিনের একজন বিজ্ঞানী ড. মেলানি বলবাখ বলেছেন, এই পিলটি কার্যকর পিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।শেষ পর্যন্ত যদি এটা মানবদেহে কাজ করে, পুরুষেরা হয়ত প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারবে।এবং নিজেদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের দৈনন্দিন পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।তবে এটি যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে না, তাই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন সেজন্য কনডম ব্যবহার করতে হবে।ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ডের অ্যান্ড্রোলজির অধ্যাপক অ্যালান পাসি বলেছেন, কার্যকর, বিপরীতমুখী এবং খাওয়া যায়, পুরুষদের এমন একটি জন্মনিরোধক পিলের প্রয়োজন দিনদিন বাড়ছে।বছরের পর বছর নানা পরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু এখনও কোনওটি বাজারে আসেনি।তিনি বলছেন, “এখানে যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে যে, শুক্রাণুর মূল এনজাইম যা তার চলাচলের জন্য জরুরি সেটিকে থামিয়ে দেয়া, সেটি একটি অভিনব আইডিয়া। ব্যাপার হচ্ছে, এটি কাজ করে এবং দারুণ ব্যাপার হচ্ছে দ্রুতই আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে আসে শরীর।”তিনি বলেন, “ইঁদুরের ওপর পিলের যে প্রভাব তা যদি মানুষের ওপরও একইভাবে কাজ করে, তাহলে এটাই পুরুষের সেই জন্মনিরোধক পিল, যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।”অধ্যাপক অ্যালান পাসি বিবিসিকে বলেছেন, “গবেষণাগারে মানুষের শুক্রাণুর ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে, এটি একইভাবে কাজ করেছে। ফলে আমি মনে করি এখন মানবদেহে ট্রায়াল চালানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে এটি।”এদিকে, শুক্রাণুর ওপর থাকা একটি প্রোটিনকে রুখে দিয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে শুক্রাণুর সাঁতার বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন আরেকদল গবেষক।অনেকদিন ধরে চলছে পুরুষ জন্মনিরোধক পিলের পরীক্ষাপুরুষের জন্য কনডম ছাড়া বাজারে অন্য কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেই
নারীদের জন্য জন্মনিরোধক পিল যুক্তরাজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।তবে এখনও পুরুষদের জন্য জন্মনিরোধক পিল তৈরি করা যায়নি কেন?প্রজনন করতে সক্ষম এমন পুরুষ প্রতিনিয়তই শুক্রাণু উৎপাদন করতে থাকেন শরীরের ভেতর এই প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে সেটা হরমোনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এতে করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি দেখা দেবে।এটা একটা বড় বাধা পুরুষদের জন্মনিরোধক পিল আবিষ্কারের ক্ষেত্রে।চার বছর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে একটি পিলের পরীক্ষা করা হয়েছিল পাঁচজন পুরুষের ওপর যাদের যৌনমিলনের তাড়না কমে গিয়েছিল পিল নেয়ার পরে।তবে এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে জেলের ব্যবহার বাজারে এসেছিল যা খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি।দুই হাজার এগারো সাথে পুরুষদের জন্মনিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে একটা জড়িপ করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের অ্যাঞ্জিলা রাসকিন ইউনিভার্সিটিতে, জড়িপে দেখা গেছে ১৩৪ জন নারীর মধ্যে ৭০ জনই মনে করেন তার পুরুষ সঙ্গী পিল নিতে ভুলে যাবেন।