ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই সৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার,বসন্তের হাওয়া বইছে চারদিকে। গাছে গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা, ফুটেছে ফুল। ঠিক ৫৩ বছর আগে এমন দিনে বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্রেরও জন্ম হয়েছিল। ৯ মাসের লড়াই শেষে অভ্যুদয় ঘটেছিল দেশটির। আর সেই লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক শুরুটা ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে।প্রতিবছর এ দিনটিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জড়ো হয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও এ দিনটিকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গন ও এর আশপাশের এলাকা।
পরিচ্ছন্ন হয়ে সেজেছে সৌধ
২৫ মার্চ দিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। সৌধস্তম্ভের চূড়া থেকে শুরু করে শহিদ বেদি, পায়ে চলার সড়ক সবখানে ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে। প্রয়োজন মতো করা হয়েছে রঙ। সৌধের মূল ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত হাঁটা পথে লাল ইটের মধ্যে সাদা রংয়ের ছোঁয়া ছড়াচ্ছে শুভ্রতা।চত্বরজুড়ে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনী, হলুদ, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের, বর্ণের ফুলের গাছ। এসব গাছে ফুটে আছে রঙিন ফুল। সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে এসব গাছেরও। নির্দেশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একেকটি ঝাউগাছ।সৌধ বেদির সামনের অংশে গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। লেকের পানিতে নতুন করে রোপন করা হয়েছে লাল শাপলা। পুরো জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাইরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সৌধ চত্বর এলাকাজুড়ে ধোঁয়ামোছা ও অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সৌধ এলাকা ছাড়াও এর বাইরের আশপাশের এলাকাতেও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে আমিনবাজার ও নবীনগর থেকে বাইশ মাইল এবং নবীনগর থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সড়ক জুড়ে সড়ক বিভাজকে রঙের কাজ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকবে সৌধ এলাকা
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই সৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার।গত ২৩ মার্চ থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সৌধ এলাকা এরইমধ্যে পরিদর্শন করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান রিপন।তিনি বলেন, “এবার স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার চাদরে স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা ঢাকা থাকবে। এরইমধ্যে আমরা জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছি।”তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে কাজ করছে। আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্মৃতিসৌধ এলাকা জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কয়েকশ পুলিশ সদস্য এই নিরাপত্তায় কাজ করবেন।”
দিবসের আনুষ্ঠানিকতার শুরু যেভাবে
স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যুষে সুর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এ সময় তাদের সেখানে দেওয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিদেশী কুটনৈতিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন।