সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
বুধবার (২ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দুদক আইনের ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানের তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় জোবায়দা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাস সাজা ভোগ করতে হবে।
অন্যদিকে জোবায়দা রহমানকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস সাজা ভোগ করতে হবে।
সেই সঙ্গে তারেক-জোবায়দা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে চার মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা চলমান। তবে, জোবায়দার এটি প্রথম ও একমাত্র মামলার রায় বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
মুদ্রা পাচারের মামলায় ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে প্রথমে খালাস দিয়েছিলেন ঢাকার আদালত। তবে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের পর হাইকোর্টের রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
খালেদার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড, তারেকের হয় ১০ বছর সাজা। পরে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে তিনবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। তবে, সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় তারেককে যাবজ্জীবন সাজা খাটার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে তারেক-জোবায়দার মামলার রায় ঘোষণার জন্য বুধবার (২ আগস্ট) দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৪২ জন সাক্ষ্য দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। এতে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া মামলায় আসামি করা হয় তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে।
এরপর ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। এ মামলা থেকে সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বর্তমানে তারা পলাতক। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তারেকের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। আর জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে তারেক রহমানকে সহযোগিতার অভিযোগে ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।