ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। Logo শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা Logo জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন Logo পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা Logo হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান Logo জগন্নাথপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo মাটিয়াইন ও টাঙুয়ার হাওর পরিদর্শন….. আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা Logo ২০২৫–২৬ সেশনের জন্য ২নং পাটলী ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটি ঘোষণা।

সিলেটের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে করণীয়

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে ‘সুন্দরী শ্রীভূমি’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তৎকালীন শ্রীহট্টকে নিয়ে লিখেছিলেন কবিতা। রবীন্দ্রনাথের সেই ‘সুন্দরী শ্রীভূমি’ সিলেটে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও পাঁচ কারণে সেই সম্ভাবনা এখন ফিকে হয়েছে।

 

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে লোক সমাগমে নিষেধাজ্ঞা | Dhaka Tribune Bangla

 

জলারবন রাতারগুল, আঁকাবাঁকা পাহাড়-টিলা, দেশের তৃতীয় ইকোপার্ক, অরণ্য, ঝর্ণা, নদী, হাওর, চা-বাগান কিংবা জাফলং, বিছানাকান্দির ও সাদাপাথরে স্বচ্ছ জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ-কী নেই সিলেটে? এখানে একসময় পর্যটকদের ভিড় থাকতো। কিন্তু ইদানিং পর্যটকরা সিলেটবিমুখ হচ্ছেন। কোথায় যেন পর্যটকদের আগ্রহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটন এলাকায় অনুন্নত অবকাঠামো, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাহীনতা, ভাঙাচোরা সড়ক, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারের অভাব। বড়দাগে এই পাঁচ কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে চান না। ঘুরে আসুন সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে | 673010 | কালের কণ্ঠ | kalerkantho

এর ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। আর এ সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ আর প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন অর্থনীতির বিপ্লব ঘটতে পারতো সিলেটে। এজন্য প্রয়োজন একটি মহাপরিকল্পনা। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগই পারে পর্যটন শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ ও প্রকাশ ঘটাতে।

এ বছরের মাঝামাঝিতে সিলেটে কয়েকদফা বন্যা হয়। তবে তার ক্ষত এখনো রয়ে গেছে। মহানগরসহ সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভাঙাচোরা। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করা পর্যটকদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এমনিতে সিলেটের পর্যটন এলাকায় যাওয়া-আসার রাস্তাগুলো অনেক সরু এবং নিম্নমানের।

সিলেটের দুটি জনপ্রিয় পর্যটনস্পটের মধ্যে রয়েছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলারবন রাতারগুল ও বিছানাকান্দি। এ দুটি পর্যটনস্পটই গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এ দুটি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার সড়কই খানাখন্দে ভরা। এ কারণে ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। জেনে নিন সিলেটের প্রিয় বিষয়গুলো। বিপ্রপার্টি

 

বিছনাকান্দির দূরত্ব সিলেট থেকে ৪১ কিলোমিটার। এই পথের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গবীর রোড থেকে হাদারপাড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। বন্যার পানি নামার পর সড়কের পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, সেই ভাঙাচোরা সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি।

রাতারগুলের অবস্থান সিলেট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা। আবার চানুপুর থেকে মোটরঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। এ কারণে বৃষ্টির দিনে যাতায়াতে সমস্যা হয় ব্যাপক। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর লেগুনা ছাড়া কোনো গাড়িই যেতে চায় না রাতারগুল ও বিছানাকান্দিতে।

সিলেটের বিছানাকান্দিতে বেড়াতে আসা ঢাকার শাহিনা আক্তার বলেন, সিলেট খুবই সুন্দর একটা জায়গা। এখানে এলে স্বচ্ছ পাথরের ওপর দিয়ে ছলাত ছলাত শব্দ করে পানির স্রোতধারা বয়ে যেতে দেখা যায়। সেই পানিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে। এছাড়া দৃষ্টিজুড়ে সবুজ গাছ-গাছালি, পাহাড়-টিলা ও চা বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই সৌন্দর্যের মধ্যে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। যার কারণে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সিলেট শহর থেকে পর্যটনস্পটগুলোতে আসা-যাওয়ার রাস্তা খুবই ভাঙাচোরা ও সরু। এগুলো উন্নত হলে সিলেটে পর্যটকদের ঢল টেকানো যেত না।

সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। সিলেট-ভোলাগঞ্জ চারলেন সড়কের অবস্থা ভালো। কিন্তু সাদাপাথরে পর্যটকদের জন্য ওয়াশ রুম, চেঞ্জ রুমসহ অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। জাফলং, রাতারগুল, উৎমাছড়া, মায়ারবন, বিছানাকান্দি, বাংলার নীলনদ খ্যাত সারি নদীসহ সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রেই নেই ব্যবহার উপযোগী ওয়াশরুম ও পোশাক পরিবর্তনের সুবিধা। যার কারণে পর্যটকরা এসব এলাকায় গিয়ে পানিতে ভেজার পর পোশাক পরিবর্তন করতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি।

এ বিষয়ে ঘোরাঘুরি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর ম্যানেজিং পার্টনার ও রোটারি ক্লাব অব হোয়াইট স্টোন সিলেটের সভাপতি তারেক উদ্দিন লস্কর তাজ বলেন, পর্যটকদের ওয়াশ রুম, চেঞ্জ রুমের অসুবিধার বিষয়টি অনুধাবন করে আমাদের রোটারি ক্লাবের পক্ষ থেকে বছরখানের আগে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ওয়াশ রুম ও চেঞ্জ রুম করে দেওয়ার জন্য একটু জায়গা বরাদ্দ দিতে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন তাতে সাড়া না দেওয়ায় আমরা তা করে দিতে পারিনি।

তিনি বলেন, পর্যটকরা এসব অসুবিধার কারণে এখন সিলেটে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। যার জন্য আমাদের মতো পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন।

ঘোরাঘুরি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রে কোনো বিশ্রামাগার নেই। এতে পর্যটকরা এসব স্থানে এসে বিপাকে পড়েন। কেবল পর্যটন এলাকায় নয়, ওইসব স্থানে যাওয়ার পথেও ওয়াশরুম নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটার কিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, পর্যটনস্পটগুলো মানুষের লোভের শিকার হয়ে তার সুন্দর পরিবেশ হারাচ্ছে। স্পটগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। ফলে পর্যটকরা অনেক সময় পর্যটন এলাকায় গিয়ে চিপস বা অন্য খাবারের মোড়ক ফেলার জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা পানিতে ফেলছেন। এর ফলে ওই পর্যটন এলাকার পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধময় হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।

 

সিলেটের আকর্ষণীয় ৫টি পর্যটন কেন্দ্র

 

সিলেটের প্রচার বা ব্র্যান্ডিং নেই বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে এলে কোথায় কীভাবে ঘুরে বেড়ানো যাবে, এ নিয়ে সঠিক তথ্যও এক স্থান থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়েছেন অনেক পর্যটক। তাদের দাবি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে সিলেটে পর্যটনশিল্প আরও বিকশিত হবে।

ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘরের পরিচালক এবং পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. মোস্তফার শাহজামান চৌধুরী বাহার বলেন, সিলেটে শাহজালাল (রহ.), শাহপরাণ (রহ.)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার মাজার রয়েছে। শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি রয়েছে। এখানে ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘর আছে। যেখানে মানুষ বিক্রির দলিল থেকে শুরু করে শত শত বছর আগের অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুদ্রা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এগুলোও পর্যটনের অংশ। প্রশাসনের উচিত এগুলোও তাদের সুষ্ঠু প্রচার-প্রচারণায় আনা।

তিনি বলেন, নগরের চাষনী পীর এলাকার মাজারে প্রচুর বানর রয়েছে। এটি ভালোভাবে প্রচার করা হলে পর্যটকরা সেখানে যেতেন। এগুলো সংরক্ষণ ও ভালোভাবে ব্র্যান্ডিং করা গেলেও অনেক পর্যটক আসতেন।

পর্যটকদের জন্য আলাদা একটি তথ্য বাতায়ন গড়ে তোলা প্রয়োজন মন্তব্য করে মোস্তফার শাহজামান চৌধুরী বলেন, সিলেটে যারা বেড়াতে আসেন তারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, এখানে ঘুরে দেখার মতো কী কী আছে এসব বিষয়ে এক জায়গা থেকে তথ্য পাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটকদের বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসা করে ঘুরে বেড়াতে হয়। এতে তারা অনেক সময় বিপত্তিতে পড়েন।

পর্যটনশিল্পের সমস্যা-সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। বন্যায় সিলেটের বেশিরভাগ সড়কেরই ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন একটা ওয়েবসাইট করছে। যেখানে পর্যটকরা সিলেট সম্পর্কে সব তথ্য পাবেন।

লেখক: ছামির মাহমুদ:-

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।

সিলেটের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে করণীয়

আপডেট সময় ০৬:২২:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে ‘সুন্দরী শ্রীভূমি’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তৎকালীন শ্রীহট্টকে নিয়ে লিখেছিলেন কবিতা। রবীন্দ্রনাথের সেই ‘সুন্দরী শ্রীভূমি’ সিলেটে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও পাঁচ কারণে সেই সম্ভাবনা এখন ফিকে হয়েছে।

 

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে লোক সমাগমে নিষেধাজ্ঞা | Dhaka Tribune Bangla

 

জলারবন রাতারগুল, আঁকাবাঁকা পাহাড়-টিলা, দেশের তৃতীয় ইকোপার্ক, অরণ্য, ঝর্ণা, নদী, হাওর, চা-বাগান কিংবা জাফলং, বিছানাকান্দির ও সাদাপাথরে স্বচ্ছ জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ-কী নেই সিলেটে? এখানে একসময় পর্যটকদের ভিড় থাকতো। কিন্তু ইদানিং পর্যটকরা সিলেটবিমুখ হচ্ছেন। কোথায় যেন পর্যটকদের আগ্রহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটন এলাকায় অনুন্নত অবকাঠামো, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাহীনতা, ভাঙাচোরা সড়ক, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারের অভাব। বড়দাগে এই পাঁচ কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে চান না। ঘুরে আসুন সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে | 673010 | কালের কণ্ঠ | kalerkantho

এর ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। আর এ সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ আর প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন অর্থনীতির বিপ্লব ঘটতে পারতো সিলেটে। এজন্য প্রয়োজন একটি মহাপরিকল্পনা। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগই পারে পর্যটন শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ ও প্রকাশ ঘটাতে।

এ বছরের মাঝামাঝিতে সিলেটে কয়েকদফা বন্যা হয়। তবে তার ক্ষত এখনো রয়ে গেছে। মহানগরসহ সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভাঙাচোরা। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করা পর্যটকদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এমনিতে সিলেটের পর্যটন এলাকায় যাওয়া-আসার রাস্তাগুলো অনেক সরু এবং নিম্নমানের।

সিলেটের দুটি জনপ্রিয় পর্যটনস্পটের মধ্যে রয়েছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলারবন রাতারগুল ও বিছানাকান্দি। এ দুটি পর্যটনস্পটই গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এ দুটি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার সড়কই খানাখন্দে ভরা। এ কারণে ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। জেনে নিন সিলেটের প্রিয় বিষয়গুলো। বিপ্রপার্টি

 

বিছনাকান্দির দূরত্ব সিলেট থেকে ৪১ কিলোমিটার। এই পথের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গবীর রোড থেকে হাদারপাড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। বন্যার পানি নামার পর সড়কের পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, সেই ভাঙাচোরা সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি।

রাতারগুলের অবস্থান সিলেট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা। আবার চানুপুর থেকে মোটরঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। এ কারণে বৃষ্টির দিনে যাতায়াতে সমস্যা হয় ব্যাপক। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর লেগুনা ছাড়া কোনো গাড়িই যেতে চায় না রাতারগুল ও বিছানাকান্দিতে।

সিলেটের বিছানাকান্দিতে বেড়াতে আসা ঢাকার শাহিনা আক্তার বলেন, সিলেট খুবই সুন্দর একটা জায়গা। এখানে এলে স্বচ্ছ পাথরের ওপর দিয়ে ছলাত ছলাত শব্দ করে পানির স্রোতধারা বয়ে যেতে দেখা যায়। সেই পানিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে। এছাড়া দৃষ্টিজুড়ে সবুজ গাছ-গাছালি, পাহাড়-টিলা ও চা বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই সৌন্দর্যের মধ্যে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। যার কারণে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সিলেট শহর থেকে পর্যটনস্পটগুলোতে আসা-যাওয়ার রাস্তা খুবই ভাঙাচোরা ও সরু। এগুলো উন্নত হলে সিলেটে পর্যটকদের ঢল টেকানো যেত না।

সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। সিলেট-ভোলাগঞ্জ চারলেন সড়কের অবস্থা ভালো। কিন্তু সাদাপাথরে পর্যটকদের জন্য ওয়াশ রুম, চেঞ্জ রুমসহ অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। জাফলং, রাতারগুল, উৎমাছড়া, মায়ারবন, বিছানাকান্দি, বাংলার নীলনদ খ্যাত সারি নদীসহ সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রেই নেই ব্যবহার উপযোগী ওয়াশরুম ও পোশাক পরিবর্তনের সুবিধা। যার কারণে পর্যটকরা এসব এলাকায় গিয়ে পানিতে ভেজার পর পোশাক পরিবর্তন করতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি।

এ বিষয়ে ঘোরাঘুরি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর ম্যানেজিং পার্টনার ও রোটারি ক্লাব অব হোয়াইট স্টোন সিলেটের সভাপতি তারেক উদ্দিন লস্কর তাজ বলেন, পর্যটকদের ওয়াশ রুম, চেঞ্জ রুমের অসুবিধার বিষয়টি অনুধাবন করে আমাদের রোটারি ক্লাবের পক্ষ থেকে বছরখানের আগে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ওয়াশ রুম ও চেঞ্জ রুম করে দেওয়ার জন্য একটু জায়গা বরাদ্দ দিতে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন তাতে সাড়া না দেওয়ায় আমরা তা করে দিতে পারিনি।

তিনি বলেন, পর্যটকরা এসব অসুবিধার কারণে এখন সিলেটে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। যার জন্য আমাদের মতো পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন।

ঘোরাঘুরি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রে কোনো বিশ্রামাগার নেই। এতে পর্যটকরা এসব স্থানে এসে বিপাকে পড়েন। কেবল পর্যটন এলাকায় নয়, ওইসব স্থানে যাওয়ার পথেও ওয়াশরুম নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটার কিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, পর্যটনস্পটগুলো মানুষের লোভের শিকার হয়ে তার সুন্দর পরিবেশ হারাচ্ছে। স্পটগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। ফলে পর্যটকরা অনেক সময় পর্যটন এলাকায় গিয়ে চিপস বা অন্য খাবারের মোড়ক ফেলার জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা পানিতে ফেলছেন। এর ফলে ওই পর্যটন এলাকার পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধময় হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।

 

সিলেটের আকর্ষণীয় ৫টি পর্যটন কেন্দ্র

 

সিলেটের প্রচার বা ব্র্যান্ডিং নেই বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে এলে কোথায় কীভাবে ঘুরে বেড়ানো যাবে, এ নিয়ে সঠিক তথ্যও এক স্থান থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়েছেন অনেক পর্যটক। তাদের দাবি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে সিলেটে পর্যটনশিল্প আরও বিকশিত হবে।

ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘরের পরিচালক এবং পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. মোস্তফার শাহজামান চৌধুরী বাহার বলেন, সিলেটে শাহজালাল (রহ.), শাহপরাণ (রহ.)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার মাজার রয়েছে। শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি রয়েছে। এখানে ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘর আছে। যেখানে মানুষ বিক্রির দলিল থেকে শুরু করে শত শত বছর আগের অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুদ্রা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এগুলোও পর্যটনের অংশ। প্রশাসনের উচিত এগুলোও তাদের সুষ্ঠু প্রচার-প্রচারণায় আনা।

তিনি বলেন, নগরের চাষনী পীর এলাকার মাজারে প্রচুর বানর রয়েছে। এটি ভালোভাবে প্রচার করা হলে পর্যটকরা সেখানে যেতেন। এগুলো সংরক্ষণ ও ভালোভাবে ব্র্যান্ডিং করা গেলেও অনেক পর্যটক আসতেন।

পর্যটকদের জন্য আলাদা একটি তথ্য বাতায়ন গড়ে তোলা প্রয়োজন মন্তব্য করে মোস্তফার শাহজামান চৌধুরী বলেন, সিলেটে যারা বেড়াতে আসেন তারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, এখানে ঘুরে দেখার মতো কী কী আছে এসব বিষয়ে এক জায়গা থেকে তথ্য পাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটকদের বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসা করে ঘুরে বেড়াতে হয়। এতে তারা অনেক সময় বিপত্তিতে পড়েন।

পর্যটনশিল্পের সমস্যা-সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। বন্যায় সিলেটের বেশিরভাগ সড়কেরই ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন একটা ওয়েবসাইট করছে। যেখানে পর্যটকরা সিলেট সম্পর্কে সব তথ্য পাবেন।

লেখক: ছামির মাহমুদ:-