সুদখোরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গত ৩ জুন শনিবার রাত ৯ টায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর স্থানীয় কয়েকজন সুদখোরদের দায়ী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মৃতের স্ত্রী ইলা চৌধুরী শনিবার দিবাগত রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় হাবিবুর রহমান হবুসহ ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- পৌরসভার আনোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা আকবুল মিয়ার পুত্র হাবিবুর রহমান হবু, দোওজ গ্রামের আলা উদ্দিনের পুত্র জসিম উদ্দিন, রাজানগর গ্রামের সুরেন্দ্র দাসের পুত্র স্বজন দাস, রামকুমার দাসের পুত্র পুতুল দাস, কালি চরন দেবনাথের পুত্র অসিত দেবনাথ গং।
দিরাই থানার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় ৫ জনকে অভিযুক্ত করে তার স্ত্রী ইলা চৌধুরী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে মামলাটি রেকর্ড ভুক্ত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুন শনিবার রাত ৯ টার দিকে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, সুদখোর হাবিবুর রহমান হবু’দের মানসিক অত্যাচার ও নির্যাতনের কারনে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন সৌম্য চৌধুরী। হবু’রা মৃত্যুর কিছু দিন আগে পাওনা টাকার জন্যে বাড়িতে গিয়ে সৌম্য চৌধুরীকে হুমকি দেয়। আসামি হাবিবুর রহমান হবু ও জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে তার স্বামী কিছু টাকা কর্জ হিসেবে নেন এবং এসময় হবু ও জসিম ব্যাংকের চেকের খালি পাতায় স্বাক্ষর নেয়। কয়েকদিন পর কর্জ টাকাকে সুদের টাকা বলে প্রচার চালায় এবং খালি চেকে অন্যায়ভাবে ইচ্ছামত টাকার অংক বসাইয়া আদালতে চেকডিজঅনার মামলা করে। মামলা চলাবস্তায় সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়ার মধ্যস্থতায় আমার স্বামী টাকা পরিশোধ করে নিষ্পত্তি করা হয় এবং হবু ও জসিম মামলা উঠাইয়া নেবে। মামলা না উঠাইয়া তারা সু কৌশলে ৩ লাখ টাকা নেয়া কর্জে সুদে আসলে ৩০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলার রায় করে নেয়। এরপর থেকে সুদ খোর হবু’রা টাকা না দিতে পারলে বাড়িঘরসহ সমুহ সম্পত্তি তাদের নাম রেজেস্ট্রি করে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে।
মত্যুর আগে ফেসবুকে সৌম্য চৌধুরী সুদখোর হবুসহ কয়েকজন দাদন ব্যবসায়ীর নামোল্লেখ করে তার পরিণতির জন্য তাদের দায়ী করে যান। এদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হবু নৌকার মাঝি ছিল। এখন সে বিশাল টাকার মালিক। দিরাই পৌর শহরে তার ৩টি বাড়ি। এত টাকা সে কোথায় পেলো? দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেলা রানী রায়কে সুদে টাকা দিয়ে পরবর্তীতে তার বসতভিটা জোরপূর্বক দখল নেয়। সেই বাড়িতে এখন হবু বসবাস করে।