ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅদ্ভুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে ছাতকে স্মরণ সভা Logo বালি মহালে ইজারা পদ্বতি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন Logo ছাতকে আওয়ামিলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার Logo পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। Logo শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা Logo জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন Logo পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা Logo হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবের দাম

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কারণে এখন ডাবের চাহিদা আকাশচুম্বী। আর এই ডেঙ্গুর ঘাড়ে ভর করে ডাবের দাম বেড়েছে চারগুণ।

ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকটি দোকানের কোনোটিতেই ডাব নেই। তারপরও ডাব নিতে কয়েকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কারণ বিক্রেতা ডাবের জন্য আড়তে গেছেন। হাসপাতালের পূর্ব গেট থেকে কিছুটা দূরে মিলন শীল নামে একজন ডাব বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত তিনি, কথা বলারও সময় নেই। কেউ একাধিকবার দাম জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর, ‘একদাম ১৬০ টাকা। কম পাইলে অন্য জায়গায় যান।’ এমন দাম শুনে অবাক রোগীর স্বজন।

ক্রেতারা জানান, মূলত ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পর থেকেই ডাবের চাহিদা বেড়েছে। বিক্রেতারা যে দামই হাঁকছেন ডেঙ্গু রোগীর জন্য সে দামেই ডাব কিনতে বাধ্য হচ্ছেন স্বজনরা।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এসএম দিদার হোসেন বলেন, বড় সাইজের একটি ডাব তিন চার বছর আগে ৫০ টাকা ছিল। এরমধ্যে প্রায় চারগুণ দাম বেড়েছে। অসুখের কারণে আমার মতো যাদের প্রতিদিন ডাব খেতে হচ্ছে তারা খুব অসুবিধায় আছি। এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সব কিছু।

ডাব বিক্রেতা মিলন বলেন, ডেঙ্গু ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছর এ সময় ডাবের দাম বেশি থাকে। বিশেষ করে এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ হয়। তার জন্য চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে প্রচন্ড গরম থাকে।

একই পরিস্থিতি দেখা গেল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে। সেখানে আগের থেকে ৫০-৬০ টাকা বেশি দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে ডাবের দাম একশ ছাড়িয়েছে এক সপ্তাহ আগে। এখন বড় আকারের ডাব ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের ডাব ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত দুই মাস আগেও বড় সাইজের একটি ডাব বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি অসাধু সিন্ডিকেট প্রতিটি ডাব তিন থেকে চারগুণ দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তাই বড় সাইজের ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। মাঝারি মানের ডাবের দাম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর বড়গুলো ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট ডাবের সরবরাহ খুব কম। বেশির ভাগ দোকানে বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর চকবাজারের ৫ থেকে ৬টি ডাবের দোকান রয়েছে। এখানেও ১৫০ টাকার নিচে কোনো ডাব পাওয়া যায়নি। তবে আকার অনুযায়ী এখানে ডাবের দাম হাসপাতালগুলোর তুলনায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কম।

অন্যদিকে নগরীর বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার ফিরিঙ্গী বাজারেও ডাবের দাম বেড়েছে। পার্বত্য জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডাব এলেও সেগুলো বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

আড়তদাররা জানান, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী. টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাব আসছে। কিন্তু আঞ্চলিক ওই বাজারগুলোতেই দাম বেশি। গত দুই সপ্তাহে পাইকারিতে ডাবের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পাইকারি বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ডাবের এখন চাহিদা তুঙ্গে। আর বছরের এ সময় নানা ধরনের জ্বর ও অন্যান্য রোগের প্রকোপের কারণে দাম বাড়ে। প্রতি বছর এখন এ সময়টা চড়া দাম থাকে। এর মধ্যে গরমও বেশি। সে কারণেও দাম বেড়েছে।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি ডাবের দাম ছিল ২২ টাকার মতো। সেটি ২০২০ সালে গড়ে ৭৪ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে গড় দাম ১২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা কোন একটা ইস্যু পেলেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এখন ডেঙ্গু ও গরমের কারণে ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে কার আগে কে, কত দাম বাড়াবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। বাজারে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বাজার তদারকির কথা প্রচার করছে, প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে মাঠে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

ভোক্তা অধিকারের চট্টগ্রাম সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, ডাবের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও সেই ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। যা একেবারেই উচিত নয়।

তিনি বলেন, ১০০ টাকার বেশি দামে ডাব বিক্রির কোনো অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিকার।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅদ্ভুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে ছাতকে স্মরণ সভা

ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবের দাম

আপডেট সময় ০৩:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৩

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কারণে এখন ডাবের চাহিদা আকাশচুম্বী। আর এই ডেঙ্গুর ঘাড়ে ভর করে ডাবের দাম বেড়েছে চারগুণ।

ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের সামনে বেশ কয়েকটি দোকানের কোনোটিতেই ডাব নেই। তারপরও ডাব নিতে কয়েকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কারণ বিক্রেতা ডাবের জন্য আড়তে গেছেন। হাসপাতালের পূর্ব গেট থেকে কিছুটা দূরে মিলন শীল নামে একজন ডাব বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত তিনি, কথা বলারও সময় নেই। কেউ একাধিকবার দাম জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর, ‘একদাম ১৬০ টাকা। কম পাইলে অন্য জায়গায় যান।’ এমন দাম শুনে অবাক রোগীর স্বজন।

ক্রেতারা জানান, মূলত ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পর থেকেই ডাবের চাহিদা বেড়েছে। বিক্রেতারা যে দামই হাঁকছেন ডেঙ্গু রোগীর জন্য সে দামেই ডাব কিনতে বাধ্য হচ্ছেন স্বজনরা।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এসএম দিদার হোসেন বলেন, বড় সাইজের একটি ডাব তিন চার বছর আগে ৫০ টাকা ছিল। এরমধ্যে প্রায় চারগুণ দাম বেড়েছে। অসুখের কারণে আমার মতো যাদের প্রতিদিন ডাব খেতে হচ্ছে তারা খুব অসুবিধায় আছি। এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সব কিছু।

ডাব বিক্রেতা মিলন বলেন, ডেঙ্গু ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বছর এ সময় ডাবের দাম বেশি থাকে। বিশেষ করে এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ হয়। তার জন্য চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে প্রচন্ড গরম থাকে।

একই পরিস্থিতি দেখা গেল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে। সেখানে আগের থেকে ৫০-৬০ টাকা বেশি দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে ডাবের দাম একশ ছাড়িয়েছে এক সপ্তাহ আগে। এখন বড় আকারের ডাব ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের ডাব ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত দুই মাস আগেও বড় সাইজের একটি ডাব বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি অসাধু সিন্ডিকেট প্রতিটি ডাব তিন থেকে চারগুণ দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তাই বড় সাইজের ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। মাঝারি মানের ডাবের দাম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর বড়গুলো ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট ডাবের সরবরাহ খুব কম। বেশির ভাগ দোকানে বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর চকবাজারের ৫ থেকে ৬টি ডাবের দোকান রয়েছে। এখানেও ১৫০ টাকার নিচে কোনো ডাব পাওয়া যায়নি। তবে আকার অনুযায়ী এখানে ডাবের দাম হাসপাতালগুলোর তুলনায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কম।

অন্যদিকে নগরীর বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার ফিরিঙ্গী বাজারেও ডাবের দাম বেড়েছে। পার্বত্য জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডাব এলেও সেগুলো বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

আড়তদাররা জানান, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী. টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাব আসছে। কিন্তু আঞ্চলিক ওই বাজারগুলোতেই দাম বেশি। গত দুই সপ্তাহে পাইকারিতে ডাবের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পাইকারি বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ডাবের এখন চাহিদা তুঙ্গে। আর বছরের এ সময় নানা ধরনের জ্বর ও অন্যান্য রোগের প্রকোপের কারণে দাম বাড়ে। প্রতি বছর এখন এ সময়টা চড়া দাম থাকে। এর মধ্যে গরমও বেশি। সে কারণেও দাম বেড়েছে।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি ডাবের দাম ছিল ২২ টাকার মতো। সেটি ২০২০ সালে গড়ে ৭৪ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে গড় দাম ১২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা কোন একটা ইস্যু পেলেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এখন ডেঙ্গু ও গরমের কারণে ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে কার আগে কে, কত দাম বাড়াবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। বাজারে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বাজার তদারকির কথা প্রচার করছে, প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে মাঠে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

ভোক্তা অধিকারের চট্টগ্রাম সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, ডাবের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও সেই ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। যা একেবারেই উচিত নয়।

তিনি বলেন, ১০০ টাকার বেশি দামে ডাব বিক্রির কোনো অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিকার।