বিনোদন ডেস্কঃ
দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর, এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা কিংবা কিংবদন্তি। যেকোনো উপাধিই যেন আইয়ুব বাচ্চুর অর্জনের কাছে নগন্য। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় চুরমার করে রুপালি গিটার ফেলে তিনি চলে গেছেন আজ ৫ বছর। কিন্তু আজও ভক্তমনে আইয়ুব বাচ্চু প্রাণবন্ত।
মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যান্ড সংগীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্ত-অনুরাগীরা আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারে জন্ম হয় এই কিংবদন্তির। ১৯৭৬ সালে কলেজ জীবনে আগলি বয়েজ নামক ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। এরপর ১৯৭৭ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডে যোগদান করেন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই দলটির সাথেই যুক্ত ছিলেন তিনি। একই বছরে জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সোলস-এর প্রধান গিটারবাদক হিসেবে যোগদান করেন আইয়ুব বাচ্চু। সোলসের সঙ্গে তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন।
পরে ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। পরে লাভ রান্স ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা পায় সেটি। তিনি তার মৃত্যু অবধি ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ব্যান্ডটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং শ্রোতাদের উপহার দিয়ে গেছেন দারুন সব গান।
প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তার এই পথ চলায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম শীর্ষ তারকা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গিটার হাতে মঞ্চে উঠলেই দর্শক কণ্ঠ মেলাতো তার সঙ্গে। ভক্তরা তাকে নাম দিয়েছিল ‘বস’।
তবে শুধু রক বা ব্যান্ডের গানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না এই সংগীত তারকা। আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও মাতিয়ে রেখেছেন শ্রোতাদের। খুব অল্প হলেও চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। সেই গানগুলোও অমর হয়ে আছে সংগীত প্রিয় মানুষের মনে।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক। তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। এটি ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। তবে সফলতা শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে।
পরে ১৯৯৫ সালে ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি প্রকাশ করেন আইয়ুব বাচ্চু, যা প্রচুর সফলতা অর্জন করে। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো দিয়ে তিনি মানুষের মনে আরও গভীরভাবে ছাপ ফেলে দেন। তার অন্য একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে আছে- সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।
আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি ১৯৯২ সালে ‘এলআরবি ১’ এবং ‘এলআরবি ২’ বাংলাদেশের প্রথম ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম ‘সুখ’ প্রকাশ হয় ১৯৯৩ সালে। এটি ছিল অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম। দলটির অনান্য অ্যালবামগুলো হলো- তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), আমাদের (১৯৯৮), বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নাই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২), রাখে আল্লাহ মারে কে (২০১৬)।
ব্যক্তি জীবনে আইয়ুব বাচ্চু ১৯৯১ সালের ৩১শে জানুয়ারি তার বান্ধবী ফেরদৌস চন্দনাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব।