নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। এটাই মূলত ব্রাজিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যারা এসেছে কাতারে। তাদের পা থেকে এমন সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজানো খেলাই দেখতে চায় ভক্ত-সমর্থকরা। শত্রুরাও ব্রাজিলের খেলা দেখতে বসে সুন্দর ফুটবলের আশায়।
গ্রুপ পর্বে নেইমারসহ বেশ কয়েকজনের ইনজুরির কারণে সত্যিকার ব্রাজিলকে দেখতে পাওয়া যায়নি। অবশেষে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পাওয়া গেলো। প্রতিপক্ষে রক্ষণদুর্গ চূর্ণ করে কিভাবে একের পর গোল দেয়া যায়, সেটাও দেখা গেলো। ঠিক জোগো বোনিতো।
নেইমার, ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, রাফিনহা কিংবা লুকাস পাকুয়েতা- তাদের পায়ে সুন্দর ফুটবলে জোগো বোনিতোর দেখা মিলেছে। গোলের পর আবার সাম্বা নাচের অসাধারণ ডিসপ্লেও হয়েছে মাঠের মধ্যে। ব্রাজিলিয়ানদের গোল সেলিব্রেশন নিঃসন্দেহে আর সবার চেয়ে আলাদা।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অসংখ্য আক্রমণ করেও ক্যামেরুনের বিপক্ষে গোল পায়নি সেলেসাওরা। উল্টো ১ গোল হজম করে হারতে হয়েছিলো তাদের। কিন্তু নকআউটে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার জালে গুনে গুনে বল জড়াতে শুরু করেছে ব্রাজিল। প্রথমার্ধেই চারবার বল জড়ায় তারা এশিয়ার অন্যতম প্রতিনিধিদের জালে। গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস, নেইমার, রিচার্লিসন এবং পাকুয়েতা।
ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, নেইমার এবং রাফিনহার সমন্বয়ে গড়া হয়েছে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। ভয়ঙ্কর এই আক্রমণভাগকে রোখার সাধ্য দক্ষিণ কোরিয়ার ছিল না।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এই ম্যাচে দলে ফিরেছেন নেইমার। তার ফেরাতে যেন দল পুরোপুরি উজ্জীবিত এবং ম্যাচের সপ্তম মিনিটে প্রথম আক্রমণেই গোল বের করে নেয় সেলেসাওরা। এরপর ১২, ২৯ এবং ৩৬তম মিনিটে আরও তিনবার দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল জড়িয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু আক্রমণেও গোল আর বের করা যায়নি। বরং, কাউন্টার অ্যাটাকে গিয়ে একটি গোল আদায় করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
ম্যাচের ৭ম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে অসাধারণ এক আক্রমণ সাজান রাফিনহা। তিনি ডানপ্রান্ত বল ঠেলে দিলে সেটা ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র পেয়ে যান এবং সময় নিয়ে ডান পায়ের শট নেন তিনি। জড়িয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার জালে।
১১তম মিনিটে বক্সের মধ্যে রিচার্লিসনকে ফাউল করেন দক্ষিণ কোরিয়ার ৫ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় জুং উ ইয়ং। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ১২তম মিনিটে স্পট কিক নেন নেইমার। জড়িয়ে যায় কোরিয়ানদের জালে।
১৬ মিনিটে গোলের অসাধারণ এক সুযোগ পেয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। হাওয়াং হি চানের দুর্দান্ত শটটি দারুণ ক্ষিপ্রতায় গোল থেকে ব্রাজিলকে বাঁচান গোলরক্ষক অ্যালিসন।
২৩ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের অসাধারণ এক শট ফিরিয়ে দেন কোরিয়ান গোলরক্ষক। ২৯তম মিনিটে অসাধারণ এক সম্মিলিত আক্রমণ থেকে গোল আদায় করে নেয় ব্রাজিল। এবার গোলদাতা রিচার্লিসন।
নিজে বক্সের সামনে বল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে দারুণ স্কিল দেখান। এরপর বল ঠেলে দেন মার্কুইনহোসের দিকে। তিনি বল দেন থিয়াগো সিলভার কাছে। সিলভা আলতো টোকায় বল ঠেলে দেন বক্সের ভেতরে। পেয়ে যান রিচার্লিসনই। সামনে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। আলতো টোকায় বলটি তিনি জড়িয়ে দিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জালে।
৩২তম মিনিটেই দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। এবারও হাওয়াং হায়ে চান শট নিয়েছিলেন ব্রাজিলের পোস্ট লক্ষ্যে। কিন্তু অ্যালিসন তৎপর ছিলেন সেখানে। বল তার হাতের মুঠোয় চলে যায়।
৩৬তম মিনিটেই একহালি ব্রাজিলের। এবার গোলদাতা লুকাস পাকুয়েতা। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে এসে বামপ্রান্তে ভিনিসিয়ুসকে পাস দেন নেইমার। ভিনিসিয়ুস বলটি নিয়ন্ত্রনে নিয়েই আলতো টোকায় বল বক্সের মধ্যে ডানপ্রান্ত ফেলেন। লুকাস পাকুয়েতা এক শটেই সেই বলটি জাড়িয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার জালে।
৪৫ মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান রিচার্লিসন। গোলরক্ষকই ছিল শুধু তার সামনে। রিচার্লিসনের শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক। ফিরতি বলটি পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু তিনিও পারেননি বলটি কোরিয়ানদের জালে জড়াতে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই (৪৭তম মিনিটে) গোলের সোনালি এক সুযোগ পেয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। সন হিউ মিন একেবারে গোলরক্ষকে সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার শটটি অসাধারণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন অ্যালিসন।
৫৪ত মিনিট গেলের অসাধারণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন রাফিনহা। মাঝ মাঠ থেকে লম্বা পাসে বল পেয়ে ডান প্রান্ত ধরে বল নিয়ে তিনি প্রবেশ করেন কোরিয়ার জালে এবং কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন কোরিয়ার জালে। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। ভিনিসিয়ুস ফিরতি বল পেলেও বল বাইরে মেরে দেন।
৬২ মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ ব্রাজিলের। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান নেইমার। এরপর বল ডেন ডানপ্রান্তে রাফিনহাকে। বল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে বাম পায়ের অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় দক্ষিণ কোরিয়া।
৬৮ মিনিটে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। সন হিউং মিনের শট প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন গোলরক্ষক অ্যালিসন। ওই সময় গোলমুখে ছোট বক্সে হালকা জটলা তৈরি হয়। ওই একই সময়ে জটলার ভেতর থেকে আরও দু’বার গোলমুখে শট নিলে প্রথমে মার্কুইনহোস এবং পরে আলভেজ দলকে গোল থেকে রক্ষা করেন।
৭৭ মিনিটে একটি গোল শোধ করে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথমে ফ্রি-কিক পায় কোরিয়ানরা। শট নেন সন। ডিফেন্সের দেয়ালে লেগে বল ফিরে আসলে সেটি পেয়ে যান সিউং হো পাইক। বাম পায়ের অসাধারণ এবং বুলেট গতির এক শটে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
৮০তম মিনিটে আবারও অ্যালিসনের দক্ষণতা এবং ক্ষিপ্রতায় রক্ষা পায় ব্রাজিল। এবার গোলের জন্য শট নেন কোরিয়ার এক স্ট্রাইকার; কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিত গোল থেকে ব্রাজিলকে রক্ষা করেন তিনি।
৮৯ তম মিনিটি বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ক্রস দেন মার্টিনেলি। দানি আলভেজ অসাধারণ এক শট নিলে কোরিয়ান ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে দলকে গোল থেকে রক্ষা করেন।