বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘জনগনের মধ্যে আজকে রব উঠেছে যে, আর এই স্বৈরাচার টিকতে পারবে না। জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে ।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। যাতে জনগণ নিজের হাতে ভোট দিয়ে নিজের প্রতিনিধি দিয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আজকে জনগণের মধ্যে রব উঠেছে, এ স্বৈরাচার আর টিকতে পারবে না। এ স্বৈরাচারের সময় শেষ, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের আগামী দিনের বাংলাদেশ।
বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, এ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্র চালাচ্ছে। এ সরকার নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অর্থ লুটপাট, আত্মসাৎ ও পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে।
দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দরিদ্র মানুষরা খেতে পায় না। দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়ে গেছে, মধ্যবিত্তরা দরিদ্র হয়ে গেছে। জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জনগণ মনে করে যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা আর ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবে না, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যারা দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে, তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না। যারা বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে, তারা বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারবে না।
যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে দেশে মানবাধিকার থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ৬০০ বেশি গুম করেছে, প্রায় এক হাজারের বেশি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করেছে। বিরোধী দলীয় কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যারা এ সরকারের রুদ্ররোষে বানোয়াট মামলার আসামি নয়। একটি স্বাধীন দেশে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আজকে জনগণ আওয়াজ তুলেছে, দেশকে বাঁচাতে হলে, জনগণকে বাঁচতে হলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। জনগণকে রক্ষা করার জন্য, মুক্ত করার জন্য ১০ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে দশ দফা দাবিনামা ঘোষণা করা হয়েছে। এ দাবিনামা বিএনপির নয়, এ দাবিনামা জনগণের। এ ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য জনগণ আজ মাঠে নেমেছে।
কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার কখনো আপসে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানে আইয়ুব খানের মতো স্বৈরাচারকেও এ দেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় করেছিল। স্বৈরাচার এরশাদকেও এ দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় করেছিল। কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টকে দেশটির জনগণ রাস্তায় নেমে বিদায় করে দিয়েছে। এ দেশের জনগণও অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। জনগণ রাস্তায় নামা শুরু করেছে। আমাদের গণসমাবেশগুলো তার প্রমাণ।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এমএ সেলিম ও ডা. সিরাজুল ইসলাম।