ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম যুগ যুগ ধরে দেশ বিখ্যাত। আর এই চমচমের জন্য এখন বিখ্যাত টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার। পাঁচআনী বাজার মূলত মিষ্টি বিক্রির স্থান হিসেবে বিখ্যাত। এখানে অন্তত ১৬টি মিষ্টির দোকানের চমচম তৈরি হয়। তবে গত তিন মাস ধরে গ্যাস সংকটের কারণে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত সেই চমচম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও তাদের আগের মতোই পুরো গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। জ্বালানি হিসেবে কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে চমচম তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাই। এতে চার ভাগের এক ভাগ চমচম উৎপাদন করতে পারছেন না কারিগররা। ফলে চমচম উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ খরচ কয়েক গুণ বেশি হচ্ছে।
সরেজমিন টাঙ্গাইল শহরের চমচমের দোকান গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি চমচম দোকানের আলাদা আলাদা কারখানা রয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানায় ৪ থেকে ৮ টি করে গ্যাসের চুলা বসানো আছে। কিন্তু গ্যাস না পাওয়ায় কারিগররা কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে প্রথম দুধ জ্বাল দিচ্ছেন। পরে দুধ থেকে ছানা বের করে চিনি এবং আংশিক ময়দা দিয়ে চমচম তৈরি করছেন। চমচমে নরম ভাব হয় যেমন, তেমন ঘ্রাণেও অনন্য। দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি গুঁড়া মাওয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয় যা স্বাদে আনে অন্যরকম বৈচিত্র্য।
গাজীপুর থেকে চমচম কিনতে আসা ক্রেতা রাকিব হাসান বলেন, বইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের চমচমের সুখ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিষয়টি জানার পর টাঙ্গাইলে এসে চমচম কিনে খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। সেই কারণে দুই বন্ধু টাঙ্গাইল এসেছি। দুই কেজি চমচম ৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। খেতে অনেক সুস্বাধু ও প্রসিদ্ধ।
গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর আব্দুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান গ্যাস খুবই কম। লাকড়ি দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ মণের বেশি লাকড়ি লাগে। তবে উৎপাদন আগের মতো না হওয়ায় এক বেলা দোকানে মিষ্টি থাকে, আরেক বেলা থাকে না। এতে বেচাকিনিও খুব কম হয়।’
পোড়াবাড়ী মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক আবু সাইদ বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকা অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ করে চমচম উৎপাদন করা যেতো। বর্তমানে কাঠের লাখড়ি দিয়ে চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মণ উৎপাদন করা যায়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ গ্যাস কম সরবরাহ থাকলেও বিল আগের মতোই আসছে। আগে মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল আসতো এখনও ৫০/৬০ হাজার টাকারই বিল আসছে।’
টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এবং জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন করা যাচ্ছে। প্রতিদিন আমার দোকানে ২০/২৫ মণ লাকড়ি ব্যবহার হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করায় খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। শহরের প্রত্যেকটি মিষ্টির দোকানের কারখানায় গ্যাসের চূলায় চমচম তেরি করা হয়। গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ঢাকা প্রধান ফিডার থেকে গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমিতির অধীনে ২০০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। আর সবমিলিয়ে টাঙ্গাইল জেলায় ১০০০টির মতো মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে চমচম বিক্রি হয়।’
টাঙ্গাইল নগরজলফৈ তিতাসের জোনাল মার্কের্টিং অফিসের ম্যানেজার খোরশেদ আলম বলেন, ‘ফিডার লাইন থেকে গ্যাস কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন গ্যাস পেতাম। বর্তমানে প্রতিদিন পাচ্ছি ৪০ মিলিয়ন। ভোলায় কিছু গ্যাস আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই গ্যাস ঢাকায় আনার চেষ্টা করছে। সেটি আনতে পারলে গ্যাস সরবরাহ ঠিক হবে বলে আশা করছি।’