বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ইউএনও কার্যালয় থেকে বিদায়বেলায় দেখা গেলো হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য। এর আগে উপজেলা পরিষদে ফুল ছিটিয়ে বিদায় জানানো হয় এ কর্মকর্তাকে। এ সময় উপজেলা পরিষদে জড়ো হন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। উপজেলা চত্বরে বসে কাঁদছিলেন বারখাইন ইউনিয়নের ৫০ বছর বয়সী রহিমা বেগম। তার ভাষায়, ‘টিয়ুনু বলে যাইবগু? এহন আঁরে হনে চাইবু (ইউএনও নাকি চলে যাচ্ছে, এখন আমাকে কে দেখবে?)।’
এদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সরওয়ার জামানও এসেছেন শেখ জোবায়ের আহমেদকে বিদায় জানাতে। কারণ শেখ জোবায়ের আহমেদ ইউএনও থাকা অবস্থায় তাকে চাতরী চৌমুহনী বাজারে দোকান করে দিয়েছেন। ওই দোকানের আয়েই তার সংসার চলছে।
গত ৩ বছর ১১ মাস চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ জোবায়ের আহমেদ। পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন গোপালগঞ্জে।
আনোয়ারা উপজেলা থেকে ইউএনও হিসাবে শেখ জোবায়ের বিদায় নেয়ার সময় কেঁদেছেন এখানকার অনেক বাসিন্দা। কেঁদেছেন ইউএনও নিজেও। ফুল ছিটিয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে কোনো স্বজনের বিদায়ে যেমন মানুষ পিছু পিছু অনেক দূর পর্যন্ত এসে বিদায় দেন, শেখ জোবায়ের আহমেদের বিদায়েও ঠিক তেমনই করেন আনোয়ারা উপজেলার স্থানীয়রা। বিদায়ের সেই ভিডিও ও ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
বিদায়ের সময় কান্নার প্রসঙ্গ জানতে চাইলে বর্তমানে গোপালগঞ্জে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ জোবায়ের আহমেদে মুঠোফোনে হেসে বললেন, তিন বছরের বেশি সময়ে আনোয়ারার জনগণের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাই তিনি কেঁদেছেন এবং মানুষ ভালোবাসার জায়গা থেকে কেঁদেছেন।
তিনি আরও জানান, একজন ইউএনওর কাছে মানুষ কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আসেন। আমার সঙ্গে সবাই কথা বলতে পেরেছেন। আমি মানুষের কথা শুনেছি। ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপেও অনেকে যোগাযোগ করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি মানুষের ভোগান্তি কমাতে। ইউএনও হিসেবে কাজের দায়িত্বের বাইরেও মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
শেখ জোবায়ের আরও বলেন, অবকাঠামো তৈরি করেছি বলে মানুষ আমার জন্য কাঁদেননি, কেঁদেছেন তাদের সঙ্গে আমার যে যোগাযোগ ছিল, সে জন্য।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনোয়ারা উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শেখ জোবায়ের আহমেদ। তার নেতৃত্বে তিন বছরে দুবার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে দেশসেরা উপজেলা হয়েছে আনোয়ারা। দায়িত্ব পালনকালে তিনি উপজেলা সদরে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, মিনি শিশু পার্ক তৈরি, দুটি নান্দনিক পুকুরঘাট নির্মাণ, উপজেলা সদরের একমাত্র খেলার মাঠটির উন্নয়ন, গাছ লাগিয়ে পরিষদ চত্বরকে সাজানো, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র—এ ধরনের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি ও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন জোবায়ের আহমেদ। ইউএনওর বিভিন্ন সৃজনশীল পরিকল্পনায় সহযোগিতা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হোক চৌধুরীসহ অন্যরা।
আনোয়ারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শেখ জোবায়ের একজন ‘ডায়নামিক লিডার’ ছিলেন।