ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅদ্ভুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে ছাতকে স্মরণ সভা Logo বালি মহালে ইজারা পদ্বতি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন Logo ছাতকে আওয়ামিলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার Logo পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। Logo শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা Logo জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন Logo পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা Logo হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

প্রেমিকাকে বাসায় এনে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খুন

২০১৯ সালে স্কুলে পড়া অবস্থায় আদিবা আক্তার নামে এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিজয় রহমান (১৯)। তাদের সম্পর্ক চলা অবস্থায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেসিকা মাহমুদ ওরফে জেসির (১৬) সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বিজয়। তিনি গোপনে দুইজনের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন।

এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় ও আদিবা গোপনে বিয়ে করেন। বিজয় ও আদিবার বিয়ের বিষয়টি এক সময় জেনে যায় জেসি। পরে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয় জেসি। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মধ্যে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে এনে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাদে তাদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে গলাটিপে হত্যা করেন। জেসি মুন্সীগঞ্জের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা এলাকার সেলিম দেওয়ানের মেয়ে।

এ ঘটনায় গত ৪ জানুয়ারি নিহত জেসির বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে স্কুলছাত্রী জেসি হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। তদন্ত শেষে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয়কে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। বিজয় মুন্সীগঞ্জের সদর থানার আরিফুজ্জামান আরিফের ছেলে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় জানিয়েছেন, হত্যার পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (৩ জানুয়ারি) বিকেলে আদিবা ভুক্তভোগী জেসির সঙ্গে দেখা করলে কথোপকথোনের (বিজয়ের সঙ্গে) স্ক্রিনশট দেখায়। এ ঘটনা মীমাংসা করতে আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে আনেন। পরে বিজয়কে ফোন কল করে ছাদে আসতে বলেন আদিবা। এরপর ছাদে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে জেসি অচেতন হয়ে পড়ে। পরে তারা জেসিকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে বাসায় ঢুকে পড়েন। এরপর বিজয়ের চাচা জেসিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে বিজয় ও তার পরিবারের সদস্যরা বাসার নিচে নেমে আসেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বিজয় জেসির ভাইকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেন। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর শুনে বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারেন, জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় বিজয় ও আদিবাসহ অজ্ঞাতনামা আরও এক-দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর গত ৪ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিজয়ের সহযোগী আদিবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভুক্তভোগী জেসির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছি, গত ৩ জানুয়ারি আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে জেসির বাসায় যান আদিবা। সেখান থেকে জেসিকে নিয়ে যান বিজয়ের বাসার ছাদে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিজয় জেসির ভাইকে ফোন কলের মাধ্যমে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলেন। হাসপাতালে গিয়ে জেসিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে গত চার দিন আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে তিনি নিরাপদ মনে না করায় ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকেন। সেখানেও নিরাপদ মনে না করায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপন করেন। গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅদ্ভুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে ছাতকে স্মরণ সভা

প্রেমিকাকে বাসায় এনে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খুন

আপডেট সময় ০৪:১৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

২০১৯ সালে স্কুলে পড়া অবস্থায় আদিবা আক্তার নামে এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিজয় রহমান (১৯)। তাদের সম্পর্ক চলা অবস্থায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেসিকা মাহমুদ ওরফে জেসির (১৬) সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বিজয়। তিনি গোপনে দুইজনের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন।

এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় ও আদিবা গোপনে বিয়ে করেন। বিজয় ও আদিবার বিয়ের বিষয়টি এক সময় জেনে যায় জেসি। পরে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয় জেসি। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মধ্যে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে এনে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাদে তাদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে গলাটিপে হত্যা করেন। জেসি মুন্সীগঞ্জের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা এলাকার সেলিম দেওয়ানের মেয়ে।

এ ঘটনায় গত ৪ জানুয়ারি নিহত জেসির বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে স্কুলছাত্রী জেসি হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। তদন্ত শেষে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয়কে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। বিজয় মুন্সীগঞ্জের সদর থানার আরিফুজ্জামান আরিফের ছেলে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় জানিয়েছেন, হত্যার পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (৩ জানুয়ারি) বিকেলে আদিবা ভুক্তভোগী জেসির সঙ্গে দেখা করলে কথোপকথোনের (বিজয়ের সঙ্গে) স্ক্রিনশট দেখায়। এ ঘটনা মীমাংসা করতে আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে আনেন। পরে বিজয়কে ফোন কল করে ছাদে আসতে বলেন আদিবা। এরপর ছাদে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে জেসি অচেতন হয়ে পড়ে। পরে তারা জেসিকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে বাসায় ঢুকে পড়েন। এরপর বিজয়ের চাচা জেসিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে বিজয় ও তার পরিবারের সদস্যরা বাসার নিচে নেমে আসেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বিজয় জেসির ভাইকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেন। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর শুনে বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারেন, জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় বিজয় ও আদিবাসহ অজ্ঞাতনামা আরও এক-দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর গত ৪ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিজয়ের সহযোগী আদিবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভুক্তভোগী জেসির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছি, গত ৩ জানুয়ারি আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে জেসির বাসায় যান আদিবা। সেখান থেকে জেসিকে নিয়ে যান বিজয়ের বাসার ছাদে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিজয় জেসির ভাইকে ফোন কলের মাধ্যমে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলেন। হাসপাতালে গিয়ে জেসিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে গত চার দিন আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে তিনি নিরাপদ মনে না করায় ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকেন। সেখানেও নিরাপদ মনে না করায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপন করেন। গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়।