জাতিসংঘ বলছে, তুরস্কে দুটি ভূমিকম্পে ১০টি প্রদেশে ৪৬ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ লাখ শিশু। এ দুর্ঘটনায় অনেক শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে।তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৭০ লক্ষাধিক শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।মঙ্গলবার জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) মুখপাত্র জেমস এলডার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, তুরস্কে দুটি ভূমিকম্পে ১০টি প্রদেশে ৪৬ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ লাখ শিশু। এ দুর্ঘটনায় অনেক শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে।ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।এ প্রসঙ্গে ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া মোট মৃত্যু বর্তমান সংখ্যার চেয়ে হাজার হাজার বেশি হতে পারে।ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ক্ষুধা ও ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করছে জানিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব শিশু পরিবারের সঙ্গে রয়েছে তারা রাস্তা, মল, স্কুল, মসজিদ, বাস স্টেশন ও সেতুর নিচে ঘুমাচ্ছে।৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, যার উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারসিক জেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থার তথ্যমতে, প্রথমে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।এরপর অন্তত ১০০ বার কেঁপে ওঠে (আফটার শক) এ দুই দেশ। পরদিন দুপুর দেড়টার দিকে তুরস্কে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এসব ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে হাজারো বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন ভবনের ধংসাবশেষ থেকে জীবিতদের আর্তি শোনা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ক্ষীণ হয়ে এসেছে সেই আর্তি; অর্থাৎ এখনও যারা চাপা পড়ে আছেন, তাদের অনেকে ইতোমধ্যে মারা গেছেন,’ বিবিসিকে বলেন তিনি।সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে আরও অনেকগুলো আফটারশক হয়।যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।গত প্রায় ৫ দিনে ভয়াবহ এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তার মধ্যে সিরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার মরদেহ।তবে এই সংখ্যাটি আরও কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা যায়নি।গত এক দশকের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার যেসব প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসবের মধ্যে আলেপ্পো অন্যতম। প্রদেশটির বিভিন্ন শহর এখনও ক্ষমতাসীন বাশার সরকারের বিরোধীরা নিয়ন্ত্রণ করে। সোমবারের ভূমিকম্পে সিরিয়ার অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় ৪০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত আলেপ্পোতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি।গৃহযুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিরিয়ার ওপর, যেগুলো এখনও কার্যকর আছে। তারমধ্যে একটি হলো সিরিয়ার বিমান ও সমুদ্রবন্দরে বিদেশি উড়োজাহাজ ও জাহাজ প্রবেশ বা নোঙ্গর বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা।এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ায় ত্রাণ পাঠাতে অনেক দেশের ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না।বুধবার অবশ্য সিরিয়াতে ৬ ট্রাকভর্তি ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে জাতিসংঘ। ভূমিকম্পের পর এটি ছিল সিরিয়াতে প্রথম কোনো বিদেশি ত্রাণের সরবরাহ।তবে বিবিসিকে ওবাদাহ আলওয়ান জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় এই সরবরাহ খুবই অল্প।