নগরে তারা ‘কাইজ্যা পার্টি’ নামেই পরিচিত। টার্গেট মেডিক্যাল সরঞ্জাম এবং দামি পণ্য। তারা রিকশা নিয়ে ঘুরেন। এরপর যাত্রীদের সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া শুরু করেন। এক দল থাকেন হাঁটাওয়ালা। একজন মাদুলিওয়ালা। আরেক দল পল্টিওয়ালা। তারা রিকশার যাত্রীর সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া লাগান। এই সুযোগে রিকশায় থাকা চক্রের অন্য সদস্যরা মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান। কাইজ্যা পার্টির গ্রুপের প্রধান সাইদুর।
সম্প্রতি এ ধরনের প্রতারণার ঘটনায় মামলা হলে মোহাম্মদপুর থানার বসিলা এলাকা থেকে চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।গত ২০শে ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা থেকে ভিকটিম মহিউদ্দিন দু’টি মেডিকেল সরঞ্জামসহ মেশিন নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় রিকশা নিয়ে হাজির হন কাইজ্যা পার্টির হোতা সাইদুর। শেওড়াপাড়া আসার জন্য রিকশায় উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর রিকশা নষ্ট হয়েছে বলে প্রতারক সাইদুর হাঁটতে বলেন মহিউদ্দিনকে। কিছুদূর যেতেই সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা ২ থেকে ৩ জন সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া লাগিয়ে দেন ভুক্তভোগী মহিউদ্দিনের সাথে। এই সুযোগে মেডিক্যাল এর মালামালসহ রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় সাইদুর। পরে থানায় অভিযোগ করলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চক্রের দুই সদস্য সাইদুর রহমান হাওলাদার এবং মো. মোরশেদকে মোহাম্মদপুর থানার বসিলা এলাকা গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার অভিনব কৌশল সম্পর্কে তথ্য দেয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কেরানীগঞ্জের শহীদনগর এলাকা থেকে কয়েক লাখ টাকার মেডিকেল যন্ত্রাংশ এবং কসমেটিকস সামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদের গ্রুপে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আরও ৭ থেকে ৮ জন সদস্য রয়েছে। প্রতারণার অংশ হিসেবে তারা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে এই কাজ করেন। তাদের মধ্যে এক দল থাকেন হাঁটাওয়ালা। তারা সেই যাত্রীর সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া লাগান। একজন মাদুলিওয়ালা। যিনি রিকশা চালান এবং পরে রিকশার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান। সাইদুর এই দলের মাদুলিওয়ালা। আরেক দল পল্টিওয়ালা। যখন কোনো যাত্রী মালামাল বোঝাই রিকশা খুঁজতে থাকেন তখন পল্টিওয়ালা দল উল্টো রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করে। মালামাল হাতিয়ে নেয়ার পর সেই টাকার ৭০ শতাংশ সবাই সমানভাগে ভাগ করে নেন। অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পান মাদুলিওয়ালা এবং ১০ শতাংশ পান হাঁটাওয়ালা। তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এই প্রতারণার কাজ করেন। প্রায় দুই বছর ধরে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। তাদের কাছ থেকে চার লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের মেডিক্যাল মেশিন এবং দুই লক্ষাধিক টাকার কসমেটিকস সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ মেডিকেল যন্ত্রাংশ এবং কসমেটিকস সামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।কাইজ্যা পার্টির অভিনব প্রতারণা সম্পর্কে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন মানবজমিনকে বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতারণার মূল কাজটি করে থাকে। তাদের মূল টার্গেট মেডিক্যাল সরঞ্জাম এবং দামি পণ্য। প্রতারণার মাধ্যমে মালামাল লুট করে তারা নিজের অংশের অর্থ নিয়ে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় গাঢাকা দেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাত সদস্যের চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরকে চক্রের সদস্যের প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করে এই কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা আচ করতে পরলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করতে হবে।