বেশ কয়েকদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর বগুড়ায় কাঁচামরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মরিচের দাম। একদিন আগেও ৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ রোববার (২ জুলাই) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি।
সবগুলো বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমবে বলে দাবি আমদানিকারকদের। এছাড়া দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ কাঁচামরিচ কম কিনছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
শহরের রাজাবাজার ও ফতেহআলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, রোববার সকালে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকায়। বেলা ১১টার পর মহাস্থান হাট থেকে মরিচ আসার পর দাম কমে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি শুরু হয়। মহাস্থান হাট থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে কিনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বগুড়া শহরে আড়তদারদের কাছে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেন। হাতঘুরে সেই মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় এবার রবি মৌসুমে মরিচের আবাদ হয়েছিল ৯৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল প্রতি হেক্টরে ১৪ মণ। গতবছর মরিচের আবাদ হয়েছিল এক হাজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে। গতবছরের চেয়ে চলতি বছর রবি মৌসুমে মরিচের আবাদ কম হয়েছে। কম হওয়ার কারণ দেরিতে বন্যা হওয়া। বন্যা সাধারণত জুলাই মাসে হয়। কিন্তু গতবছর বন্যা হয়েছিল আগস্টে।
রবি মৌসুমে মরিচের বীজ বপন করা হয় বন্যার পরপরই আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগস্ট মাসে বন্যার কারণে রবি মৌসুমে মরিচের বীজ বপন করা হয়েছিল অক্টোবর-নভেম্বরে। দেরিতে আবাদ করতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।
বর্তমানে খরিপ-১ মৌসুম চলছে। খরিপ-১ মৌসুমে এপ্রিল মাসে মরিচের বীজ বপন করা হয়। গতবছর খরিপ-১ মৌসুমে মরিচের আবাদ হয়েছিল ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এবার খরিপ-১ মৌসুমে মরিচের বীজ বপন করা হয়েছিল ৬৫০ হেক্টর জমিতে। একেতো আবাদ কম হয়েছে; তার ওপর এবার মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে বীজের চারা গজায়নি। যে কারণে খরিপ-১ মৌসুমে মরিচের আবাদ কম হয়েছে। ফলে এবার বগুড়াতেই মরিচের চরম সংকট চলছে।
আব্দুল মোমেন নামের রাজাবাজের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে এখন প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। কেজিতে কমেছে ৩০০ টাকা। ভারতের মরিচ এলে দাম আরও কমবে। মূলত বর্ষার কারণে মরিচের সরবরাহ কম। এতে দাম বেড়েছিল।’
কাঁচামরিচ কিনতে আসা গৃৃহবধূ ফাতেমা জান্নাত বলেন, “কাঁচামরিচ এখন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে। এই দামে কাঁচামরিচ কিনতে গেলে সংসারের বাকি জিনিসপাতি কিনবো কীভাবে? দাম কমেছে, তাই বলে ৩০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ কিনতে হবে? পেঁয়াজ কিনতে গেলে মরিচ কেনা যায় না, মরিচ কিনতে গেলে পেঁয়াজ কেনা যায় না।”
রাজাবাজার আড়তদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, ঈদের জন্য ছয় দিন হিলি বন্দর, বুড়িমারী স্থল বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর বন্ধ ছিল। যে কারণে এলসি করা মরিচের ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে পারেনি। সোমবার (৩ জুলাই) থেকে এলসির মরিচের ট্রাক প্রবেশ করবে। ট্রাক প্রবেশ করা মাত্রই মরিচের দাম কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। অতিরিক্তি দাম আদায়ের সুযোগ নেই।