ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo শান্তিগঞ্জে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ শেখ মুশতাক আহমদের সমর্থনে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত Logo মুশতাক গাজিনগরীর হত্যার প্রতিবাদে গণআন্দোলনের হুঁশিয়ারি Logo ঢাকায় ১৫ সেপ্টেম্বরের বিশাল শিক্ষক সমাবেশ সফল করতে সিলেটে মতবিনিময় সভা Logo জগন্নাথপুরে আলোচনায় প্রবাসী তাহের মিয়ার নতুন ষাড় সাদা ডলপিং Logo গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সংস্কৃতির জাগরণ প্রয়োজন’— শান্তিগঞ্জে ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন Logo সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি নিখোঁজ মাওলানা মোশতাক আহমদের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন Logo সুনামগঞ্জে জমিয়ত নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী নিখোঁজ Logo বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথপুরে আলোচনা সভা ও দলীয় কার্যালয় উদ্ভোধন Logo মধ্যনগরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদের ফরম ক্রয়কে ঘিরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে Logo বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জে বর্ণ্যাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ইউরোপের পথে নিখোঁজ দুই যুবক

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে ছয়মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার দুই যুবক। তারা হলেন- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দালালচক্রের খপ্পড়ে পড়ে স্বপ্নের দেশ ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই থেকে জাহাজে ইরান পৌঁছায় মাসুদ রানা। মাসুদ চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ি পথ বেঁয়ে ইরান হতে তুরস্ক প্রবেশের চেষ্টা করে। তুরস্ক থেকে ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রবেশের স্বপ্ন ছিল মাসুদের।

তিনি তুরস্কে অবস্থানরত এক দালালের মাধ্যমে ইরান-তুরস্ক যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন। একই সঙ্গে ৮-১০ বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের ২৪ জন যুবক ছিল। উচু-নিচু পাহাড়, মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম হওয়ার সময় নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে মাসুদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

মাসুদের মা সাজনা বেগম জানান, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে আমার ছেলে রওয়ানা হওয়ার আগে বলেছিলো ‌‘আম্মাগো আমার জন্য দোয়া করিও পৌঁছে ফোন দেব। ছয়মাস হলেও ছেলেতো আর ফোন করে না, আল্লাগো আমারের ছেলেরে ফিরাইয়া দেও’ তিনি বারবার ছেলের স্মৃতি মনে করে মুর্ছা যাচ্ছিলেন।

এদিকে একই কায়দায় দালালের খপ্পড়ে পড়ে ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন সাতাইহাল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহ পাবেল আহমদসহ ৩৫ জন যুবক ইরান থেকে তুরস্ক পথে যাত্রা শুরু করে। তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় দালালচক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাহাড়-পর্বত মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তুরস্কে প্রবেশকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। এ সময় ৮ জন যুবক একদিকে লুকিয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে ২৭ জন যুবকের সঙ্গে পাবেল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেল নিখোঁজ হয়। পাবেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পাবেলের মামা সাইফুর রহমান তালুকদার জানান, শাহ পাবেল আহমদ (২৩) দেশের বাইরে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে তার ছোট ভাই শাহ ফাহিম ও তার মা নাজমা তালুকদার মারা যান। নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার নিষেধ করার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তার ছোট বোন ও ভাইকে বড় করার আগেই সে হারিয়ে গেলো। চার ভাই বোনের মধ্যে পাবেল সবার বড়।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পাবেলের মা মারা যাওয়ার পর আমাদের কাছেই সে বড় হয়েছে, মা হারা পাবেলকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। ইরান অবস্থানকালে ও তুরস্ক যাওয়ার গেমে উঠার আগে আমার সঙ্গে আমার ভাগিনার কথা হয়েছে। সে দোয়া চেয়ে বলেছিল মামা আমি পৌঁছে ফোন দেব, কিন্তু আর তাকে ফোনে পাইনি। তার সঙ্গে গেমে থাকা সঙ্গীদের তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তাদের দেখে অভিযান চালালে যে যার মতো দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পরিবারের লোকজনের দাবি দালালচক্রের সদস্যদের কঠোর শাস্তি দিলে অবৈধপথে বিদেশ যাওয়া কমে যাবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

শান্তিগঞ্জে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হাফেজ শেখ মুশতাক আহমদের সমর্থনে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ইউরোপের পথে নিখোঁজ দুই যুবক

আপডেট সময় ০৫:০৬:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে ছয়মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার দুই যুবক। তারা হলেন- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দালালচক্রের খপ্পড়ে পড়ে স্বপ্নের দেশ ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই থেকে জাহাজে ইরান পৌঁছায় মাসুদ রানা। মাসুদ চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ি পথ বেঁয়ে ইরান হতে তুরস্ক প্রবেশের চেষ্টা করে। তুরস্ক থেকে ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রবেশের স্বপ্ন ছিল মাসুদের।

তিনি তুরস্কে অবস্থানরত এক দালালের মাধ্যমে ইরান-তুরস্ক যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন। একই সঙ্গে ৮-১০ বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের ২৪ জন যুবক ছিল। উচু-নিচু পাহাড়, মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম হওয়ার সময় নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে মাসুদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

মাসুদের মা সাজনা বেগম জানান, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে আমার ছেলে রওয়ানা হওয়ার আগে বলেছিলো ‌‘আম্মাগো আমার জন্য দোয়া করিও পৌঁছে ফোন দেব। ছয়মাস হলেও ছেলেতো আর ফোন করে না, আল্লাগো আমারের ছেলেরে ফিরাইয়া দেও’ তিনি বারবার ছেলের স্মৃতি মনে করে মুর্ছা যাচ্ছিলেন।

এদিকে একই কায়দায় দালালের খপ্পড়ে পড়ে ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন সাতাইহাল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহ পাবেল আহমদসহ ৩৫ জন যুবক ইরান থেকে তুরস্ক পথে যাত্রা শুরু করে। তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় দালালচক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাহাড়-পর্বত মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তুরস্কে প্রবেশকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। এ সময় ৮ জন যুবক একদিকে লুকিয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে ২৭ জন যুবকের সঙ্গে পাবেল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেল নিখোঁজ হয়। পাবেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পাবেলের মামা সাইফুর রহমান তালুকদার জানান, শাহ পাবেল আহমদ (২৩) দেশের বাইরে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে তার ছোট ভাই শাহ ফাহিম ও তার মা নাজমা তালুকদার মারা যান। নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার নিষেধ করার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তার ছোট বোন ও ভাইকে বড় করার আগেই সে হারিয়ে গেলো। চার ভাই বোনের মধ্যে পাবেল সবার বড়।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পাবেলের মা মারা যাওয়ার পর আমাদের কাছেই সে বড় হয়েছে, মা হারা পাবেলকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। ইরান অবস্থানকালে ও তুরস্ক যাওয়ার গেমে উঠার আগে আমার সঙ্গে আমার ভাগিনার কথা হয়েছে। সে দোয়া চেয়ে বলেছিল মামা আমি পৌঁছে ফোন দেব, কিন্তু আর তাকে ফোনে পাইনি। তার সঙ্গে গেমে থাকা সঙ্গীদের তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তাদের দেখে অভিযান চালালে যে যার মতো দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পরিবারের লোকজনের দাবি দালালচক্রের সদস্যদের কঠোর শাস্তি দিলে অবৈধপথে বিদেশ যাওয়া কমে যাবে।