বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে,বাংলাদেশসহ আশেপাশের অঞ্চলের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ মাতারবাড়ি বন্দরের সুফল ভোগ করবে। পুরোপুরি চালু হলে মাতারবাড়ী বন্দর দেশের জিডিপিতে শতকরা দুই থেকে ৩% অবদান রাখবে। এছাড়া, গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হলে বাণিজ্যিকভাবে আঞ্চলিক হাব বন্দর হবে এটি। তখন এই বন্দরটি পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিভিন্ন বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের পর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে এটি বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফলাইন। এটি চালু হলে এরপর মাতারবাড়ী বন্দরও প্যারালাল অর্থনীতির লাইফলাইন হবে।”তিনি আরও বলেন, “মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। যেভাবে কাজ চলমান আছে, এভাবে কাজ চললে ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এই বন্দরে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।”প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায় বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে এক হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার ২০০ টিইইউএস ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে।”বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। ফলে পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালে। কিন্তু এর মধ্যে গত দুই বছরে এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছে ১১২টি। এই ১১২টি জাহাজ থেকে মোট ছয় কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যতসব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম বড় বড় জাহাজে করে এসেছে তা সব মাতাবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল দিয়ে এসেছে। এই চ্যানেলের গভীরতা বেশি হওয়ায় বিশ্বের যেকোনো বাণিজ্যিক বড় জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করতে পারবে এবং লোড-আনলোড করার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে।চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মাতাবাড়ির দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। জাহাজে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। সড়কপথে এর দূরত্ব প্রায় ১১২ কিলোমিটার। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি ধলঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও বন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্থানে পাথর ও মাটি ভরাট করা হচ্ছে।এছাড়া এ বন্দরের অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি। বন্দরের জন্য যে চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেটি ২৫০ মিটার চওড়া, ১৮.৫ মিটার গভীর এবং ১৪.৩ মিটার দীর্ঘ। সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় চ্যানেলের পানি পুরো নীল।প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বন্দরের নিরাপত্তায় উত্তর ও দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের ঢেউ প্রতিরোধ বাঁধ। প্রকল্পের বিশদ নকশা তৈরি কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া জেটি নির্মাণ, জাহাজ হ্যান্ডেলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও টাগ বোট ক্রয়সহ তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকল প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, “মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে অন্যান্য বন্দর থেকে এর দূরত্ব বেশি হবে না। চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে মাতাবাড়ির দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল, পায়রা বন্দর থেকে মাতাবাড়ির দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলাবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কন্টেইনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে। পুরোদমে মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান বলছে গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে দুই থেকে ৩% অবদান রাখবে।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯.৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে। তবে সম্প্রতি ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব জাহাজ ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০০ টিইইউএস কন্টেইনার বহন করতে পারে। একটি মাদার ভেসেলের ধারণক্ষমতার আট হাজার থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেইনার জাহাজ।”নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ড্রইং ডিজাইনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।”তিনি আরও বলেন, “গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪.৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে দুই হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ সকল বন্দর সুবিধাদি নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।”প্রকল্প সূত্র জানায়, তিন প্যাকেজে মাতারবাড়ি বন্দর সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সড়কটি নির্মাণের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে বন্দর পণ্য সড়কপথে দেশের যে কোনো স্থানে পরিবহন করা যাবে।সড়ক নির্মাণের তিনটি প্যাকেজ মধ্যে বন্দরের উত্তর-দক্ষিণে সংযোগের জন্য এক দশমিক ১৫ কিলোমিটার চারলেনের সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে সিডাব্লিউ-৩ এ প্যাকেজে। এই প্যাকেজের আওয়ায় আরও প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে।এছাড়া ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চারটি সেতু, দুটি গোলচত্বর ও একটি রেলওভারপাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩বি’র আওতায় ছয় দশমিক ৪০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, চারটি সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে। প্যাকেজ সিডাব্লিউ-৩সি’র আওতায় ৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক, ছয় সেতু ও একটি রেলওভার পাস নির্মাণ করা হবে।
ঢাকা
,
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।
শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা
জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন
পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা
হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
জগন্নাথপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
মাটিয়াইন ও টাঙুয়ার হাওর পরিদর্শন….. আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা
২০২৫–২৬ সেশনের জন্য ২নং পাটলী ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটি ঘোষণা।
৩০০ কোটি মানুষের উপকারে আসবে মাতারবাড়ী বন্দর, দাবি প্রতিমন্ত্রীর
- জনস্বার্থে নিউজ ২৪ ডেস্ক :
- আপডেট সময় ০৬:২৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩
- ৬৪৯ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ