রঙ চা কিংবা দুধ চা দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে আবার গ্রিন টি এর বিকল্প নেই। এমনই বিভিন্ন চেনাজানা চা-এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের চা। আসাম ও দার্জিলিং এর চা বিখ্যাত পৃথিবীর নানা দেশে। কখনও বিভিন্ন চায়ের সংমিশ্রণে প্রস্তুত হয় একেবারে ভিন্ন স্বাদের কোনও চা। বিভিন্ন দেশের খাদ্য সংস্কৃতির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নানা স্বাদের চা। দেশভেদে কিছু বিখ্যাত চায়ের কথা জেনে নিন।
চায়ের জন্মস্থান হচ্ছে চীন। ছয় হাজার বছর আগে চীনে চায়ের চাষ শুরু হয়েছিল। যদিও তখন পানীয় হিসেবে খাওয়া হতো না, শাক হিসেবে খাওয়া হতো চা। দেড় হাজার বছর আগে পানীয় হিসেবে চায়ের প্রচলন শুরু হয়, সেটাও চীনেই। বিভিন্ন ধরনের চায়ের পাশাপাশি এখানে গ্রিন টির রয়েছে আলাদা কদর। নন-অক্সিডাইজড এই চা সারা বিশ্বে খাওয়া হয় হলেও এর উত্স চীনে। চাইনিজ গ্রিন টি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদের চা পাতা থেকে তৈরি করা হয়। চমৎকার স্বাদের পাশাপাশি শরীরের জন্যও এই চায়ের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এর মধ্যে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করা, বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করা এবং ওজন কমানো।
চীনের আরেকটি বিখ্যাত চা হচ্ছে পু-এরহ টি। ভিনটেজ বা বয়স্ক চা নামেও পরিচিত এটি। বিখ্যাত এই চা আজও চীনের ইউনান প্রদেশে একচেটিয়াভাবে উত্পাদিত হয়। দেখতে ব্ল্যাক টিয়ের মতো হলেও এটি প্রস্তুত করা হয় আংশিকভাবে গাঁজিয়ে। ডেসার্টের সঙ্গে এই চা পরিবেশনের প্রচলন রয়েছে চীনে। পাশাপাশি ভারী খাবার খাওয়ার পর এই চা পান করেন অনেকে। কারণ পু-এরহ টি খাবার হজমে সহায়তা করে। প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন রয়েছে এই চায়ে।
আয়ারল্যান্ডের দ্য আইরিশ ব্রেকফাস্ট টি
সকালের নাস্তায় সঙ্গে রঙ চা খেতে পছন্দ করেন আইরিশরা। কয়েক ধরনের ব্ল্যাক টি একসঙ্গে করে প্রস্তুত করা হয় আইরিশ ব্রেকফাস্ট টি। সাধারণত সিলন ও আসাম চায়ের মিশ্রণ থেকে তৈরি হয় এই চা। কেনিয়া, রুয়ান্ডা এবং ভারত থেকে আসা চা পাতা থেকে প্রাতরাশের সতেজ চা প্রস্তুত করা হয়।
আইরিশদের চা প্রেম মূলত শুরু হয় চীন থেকে চা আমদানির পর। ধীরে ধীরে দেশজুড়ে চাপ্রীতি ছড়িয়ে পড়ে। লিকার চায়ের পাশাপাশি দেশটির একটি বড় অংশ পছন্দ করে দুধ চা খেতে। দুগ্ধজাত পণ্য আইরিশ অর্থনীতির একটি বড় অংশ, দুধ চাপ্রীতির পেছনে এটিও একটি কারণ। চায়ের সঙ্গে মধু কিংবা চিনি মেশানর প্রচলন রয়েছে।
ব্রিটিশ আর্ল গ্রে টি
১৮৩০ সালে ব্রিটিশ মুখ্যমন্ত্রী আর্ল চার্সল গ্রে -এর নাম অনুসারে এই চায়ের নামকরণ করা হয়। এর উৎপত্তি ইতিহাস নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও স্বাদে গন্ধে এটি অতুলনীয়। বাজারের সবচেয়ে সুপরিচিত ব্লেন্ডেড চায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে আর্ল গ্রে। রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকে রাজকীয় এই চা পরিবেশনের রীতি রয়েছে।
দার্জিলিং, কেইমুন এবং আসামের ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক টি-এর মিশ্রণে প্রস্তুত হয় ব্রিটিশ এই চা। এটির স্বাদ বাড়াতে মেশানো হয় বার্গামট তেল। এই ধরনের তেল সাধারণত মরক্কো, ইতালি এবং আলজেরিয়ায় পাওয়া বার্গামট সাইট্রাস ফল থেকে পাওয়া যায়।
রাশিয়ান ক্যারাভান টি
ল্যাপসাং সুচং কালো চা এবং চায়না কিমুনের মতো ক্লাসিক ব্ল্যাক টি-এর মিশ্রণে প্রস্তুত হয় রাশিয়ান ক্যারাভান টি। ধোঁয়াটে বা স্মোকি গন্ধ এই চায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর রয়েছে অনেক উপকারিতাও। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই চা ত্বকের জন্য দুর্দান্ত। পাশাপাশি এটি মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক।
মরক্কোর পুদিনা চা বা মিন্ট টি
পুদিনা চা বা মিন্ট টি মরক্কোর জন্য ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন আর্ল গ্রে চা ব্রিটিশদের জন্য এবং গ্রিন টি চীনাদের জন্য। পুদিনা চায়ে পানি, চিনি, তাজা পুদিনা এবং গানপাউডার চা এর মতো সাধারণ কিছু উপাদান থাকে। গানপাউডার চা হলো এক ধরনের সবুজ চাইনিজ চা। মরোক্কান মিন্ট চা সাধারণত রঙিন গ্লাসে গরম গরম পরিবেশিত হয়।
ভারতীয় মসলা চা
বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় ভারতীয় মসলা চা। চা এবং মসলায় দুধ এবং ফুটন্ত পানি দিয়ে তৈরি হয় মসলা চা। এই চায়ের রেসিপি শহর, সংস্কৃতি এবং স্বাদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে থাকে। তবে এলাচ, দারুচিনি, আদা এবং লবঙ্গের মতো ফ্লেভারযুক্ত মসলাগুলো সাধারণত একই থাকে।
চাই চা থেফ্লাভিন এবং ক্যাটেচিনসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর একটি প্রধান উত্স। এগুলো সক্রিয়ভাবে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে বড় ভূমিকা পালন করে।
সাউথ আফ্রিকার রুইবোস চা
দক্ষিণ আফ্রিকার সেডারবার্গ পর্বত অঞ্চলে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাওয়া হয় বিখ্যাত রুইবোস চা। এই চা সাধারণত একটি বিশেষ উদ্ভিদের ডালপালা এবং পাতা কেটে এবং থেঁতলে গাঁজন করে তারপর সূর্যের তাপে প্রাকৃতিকভাবে শুকানোর পর তৈরি করা হয়। ব্ল্যাক টি বা গ্রিন টি-এর সাথে কোন যোগসূত্র না থাকা সত্ত্বেও রুইবোস একইভাবে খাওয়া হয়। অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে এই চায়ে।