ঢাকা ওয়াসা লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদা অনুযায়ী পানি উৎপাদন এবং সরবরাহ করতে না পারায় রাজধানীর অর্ধেক এলাকাতেই দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। ট্রাকে পানি সাপ্লাই এবং জেনারেটরে পাম্প চালানোর মতো আপদকালীন বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখলেও তাতে সমস্যা মিটছে না নগরবাসীর। ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগুজে সক্ষমতার গল্প না বলে বিদ্যমান সমস্যা স্বীকার করে এর প্রতিকারে কাজ করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান মিলবে না।
ওয়াসার একটি সূত্র জানিয়েছে, মডস জোন ৩ এর নীলক্ষেত ও আজিমপুর, জোন ৫ এর মহাখালী, কাওরান বাজার ও তেজগাঁও, জোন ৬ এর ফকিরাপুল, মগবাজার ও রামপুরা-বনশ্রী, জোন ৯ এর নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত ও উত্তরা মডেল টাউন এবং জোন ১০ এর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় পানি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কমে গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সংবাদ সম্মেলন করে লোডশেডিংয়ের কারণে কয়েকটি জোনে পানি সরবরাহ সংকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর আজিমপুরে বটতলা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এক ঘণ্টাও পানি পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। মগবাজার মধুবাগ এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরেই চলছে পানির সংকট। এ ছাড়া বনশ্রী, কলাবাগান, পরীবাগ, শাহজাদপুর, খিলগাঁওসহ পুরো রাজধানীজুড়েই দিনজুড়ে থাকছে পানির সংকট।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার মিলছে না। আবার ওয়াসা পানির গাড়ি পাঠাবে বলেও পাঠাচ্ছে না।
খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী জুয়েল বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে পানি সরবরাহ নেই। অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছি না। প্রতিদিন ওয়াসার গাড়ি থেকে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। আবার কেনা পানিও সবসময় পাওয়া যাচ্ছে না।’
মগবাজার এলাকার একটি মেসে অবস্থান করা শিক্ষার্থী আনজুম আরা জানান, গত কদিন ধরে পানির সংকট চলছে। প্রায় প্রতিদিন সকালে পানি থাকে না, গোসল করার জন্য দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে।
ওয়াসা বলছে, তাদের দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। ঢাকা শহরে ২১০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার পর্যন্ত চাহিদা থাকে। সংস্থাটির দাবি, গত কদিনে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে।
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ঢাকা ওয়াসার উৎপাদনের ইকুইপমেন্ট বা যন্ত্রপাতিতে কোনও সমস্যা নেই। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি না পাওয়ার একমাত্র কারণ লোডশেডিং। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পানি সরবরাহ করতে ৪৮টি গাড়ি এবং জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলোকে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে চাহিদার তুলনায় ওয়াসার পানি উৎপাদনের সক্ষমতা বেশি থাকলেও এমন পরিস্থিতি কেন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার একজন বোর্ড মেম্বার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত এক সপ্তাহে ওয়াসার ৯১৪ পাম্পের মধ্যে জেনারেটরহীন ১৫৮টি পাম্প বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত কারণে ২৭৫ ঘণ্টা বন্ধ থেকেছে। বিভিন্ন মডস জোনে পাম্পগুলো অকেজো হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো সংস্কারও হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ওয়াসার সক্ষমতার গল্প শুনে তো মানুষের চাহিদা মিটবে না। ওয়াসা এমডির উচিত টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো স্বীকার করে এগুলোর প্রতিকারে কাজ করা। তা না হলে লোডশেডিংয়ের সমস্যা মিটলেও পানি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি মিটবে না।