এক বোনকে বাঁচাতে গিয়ে তিন বোনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিঠুন দাশ ও আরতি দাশ দম্পতির বাসায় অগ্নিকাণ্ডের পর মাত্র তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে একে একে তিন কন্যার মৃত্যু দেখতে হলো মা বাবাকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে গত ২৪ জুন মারা যায় সাখশী রাণী দাশ। সারথী দাশ মারা যায় গত ৩০ জুন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আর আজ বুধবার হ্যাপি রাণী দাশ চিরতরে চলে গেল একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
চট্টগ্রাম নগরীর বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিঠুন দাশ ও আরতি দাশ দম্পতি। তাঁদের চোখের সামনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। চার কন্যাকে নিয়ে আনন্দময় একটি পরিবারে এখন বিষাদের ছায়া। এভাবে সন্তানদের হারিয়ে দুজন শোকে পাথর হয়ে গেছেন, চোখের পানিও যেন শুকিয়ে গেছে! এ ঘটনায় পুরো সেবক কলোনিতে শোক নেমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মিঠুন ও আরতি ভোরেই কর্মস্থলে যান। চার বোন ছিল বাসায়। হঠাৎ বাসায় আগুন লাগে। সবার ছোট আড়াই বছর বয়সী বোনটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তার শরীরের ওপর মানবঢাল তৈরি করে বড় তিন বোন। এতে গুরুতর দগ্ধ হয় তারা। আগুনে দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একে একে তিনজনই মারা গেল।
গত ২০ জুন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে মিঠুনের বাসায় আগুন লাগে। ছোট্ট দুই কক্ষের বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন মিঠুন ও আরতি দম্পতি। তাদের চার মেয়ে—সারথী রাণী দাশ (১৭), সাখশী রাণী দাশ (১৩), হ্যাপি রাণী দাশ (৬) ও আড়াই বছরের সুইটি রাণী দাশ।
মিঠুন দাশের বড় ভাই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী অনিকেষ দাশ বলেন, ‘অনেক কষ্টের সাজানো পরিবারটা তছনছ হয়ে গেল!’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সাখশী নগরীর মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি, সারথী নগরীর পাথরঘাটা মেনকা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি এবং হ্যাপি স্থানীয় সানরাইজ গ্রামার স্কুলের কেজি শ্রেণির ছাত্রী ছিল।’
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কোতোয়ালি থানার এসআই শামসুল ইসলাম জানান, মেজো বোন সাখশী সকালে গ্যাসের চুলায় দুধ গরম করে ছোট বোনকে খাওয়ানোর সময় পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে। দুধের পাতিল নামিয়ে রাখলেও চুলার সুইচ বন্ধ করার কথা মনে ছিল না সাখশীর। ঘণ্টাখানেক পর সারথী ঘুম থেকে উঠে দ্রুত ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করতে যায়। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। তখন সুইটিকে বাঁচাতে তিন বোন চারদিক থেকে ঘিরে রাখে।
উল্লেখ্য, ২০ জুন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোতোয়ালি থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে করা অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুল ইসলাম।