রাজশাহীতে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জমজ শিশু চুরির অভিযোগে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। রবিবার (২১ মে) নগরীর রাজপাড়া থানায় ভুক্তভোগী নারী সৈয়দা তামান্না আক্তার (২৯) বাদী হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা ও রয়্যাল হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ আলী রিমনসহ দুই নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সৈয়দা তামান্না আক্তার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার সেলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী পিয়াস আলী (৩০) প্রবাসী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার নিশাত আনাম বর্ণা নগরীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। সেখানে এই ডাক্তারের কাছে ভুক্তভোগী নারী গর্ভকালীন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেলেন। চিকিৎসক বর্ণা ৬ মে সম্ভাব্য ডেলিভারির তারিখ দিয়েছিলেন। গত ৪ ডিসেম্বর থেকে তিনি নিয়মিত এই ডাক্তারের কাছে গর্ভকালীন সেবা নিচ্ছিলেন।
ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী গর্ভধারণের দীর্ঘ ৯ মাস ১৮ দিন পর সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারির জন্য ভুক্তভোগী নারী সৈয়দা তামান্না আক্তার গত ১৮ মে দুপুর ২টায় রাজশাহী রয়েল হাসপাতালে প্রাইভেট লিমিটেডে এ ভর্তি হন। এরপর বেলা ৩টায় তাকে সিজারের জন্য হাসপাতালের ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ওটিতে ডাক্তার নিশাত আনাম বর্ণা, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট মোহাম্মদ আলী রিমনসহ আরও দুইজন নার্স উপস্থিত ছিলেন। ওটিতে উপস্থিত নার্সরা ওই নারীর হাত বেঁধে রাখেন। এরপর কোমরে অ্যানেসথেসিয়ার ওষুধ প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার পর জ্ঞান হারান তিনি। এরপর জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন, তার পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না।
ভুক্তভোগী নারী সৈয়দা তামান্না আক্তার বলেন, অর্ধচেতন অবস্থায় আমার পেটের ভেতর থেকে বাচ্চা বের করে নেওয়া হচ্ছে এটা আমি বুঝতে পারি। আমার পূর্ণ জ্ঞান ফেরে ১৯ মে সকাল ৯টায়। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি, ১৮ তারিখ বিকেল ৪টায় ডাক্তার নিশান আনাম বর্ণা ওটি থেকে বের হয়ে যান এবং বের হয়ে যাওয়ার সময় আমার ভাই সৈয়দ হুমায়ূন কবীরসহ উপস্থিত অন্যান্য আত্মীয়দের বলেন যে, রোগীর প্রেসার অনেক বেশি বলে অপারেশন করা যাবে না, প্রেসার কমার জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে এবং প্রেসার কমলে সিজার করা হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার মোহাম্মদ আলী রিপন আমার ভাইসহ উপস্থিত অন্যান্য আত্মীয়দের বলেন যে, আমার গর্ভে কোনো বাচ্চা নেই। এরপর পূর্বের চিকিৎসার কাগজপত্র চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। তারা বাচ্চা ডেলিভারির পর অবৈধভাবে অন্য কাউকে প্রদান করেছে বলে অভিযোগ তার।
তামান্নার শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, তামান্নাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়ও নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালের লোকজন সেটি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আমাদের বলে রোগীর প্রেসার উঠেছে, ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে। এর কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে তামান্নার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই। বাচ্চা না থাকলে পেট কমল কীভাবে?
এ বিষয়ে নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সঠিক কথা বলা যাবে।