টানাটানির সংসার, যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়; এমন অবস্থা দিন পার করতে হয়েছে। ৮ বছর বয়সে তার দিনমজুর বাবা মারা যান। তখন থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে।
এমন অভাব আর শত কষ্টের মধ্যে থেকেও জীবনযুদ্ধে থেমে যাননি লালপুর উপজেলার দক্ষিণ লালপুর গ্রামের মৃত হাসান মোল্লার ছেলে জুয়েল আলী। টিউশুনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। সেই জুয়েল এবার সদ্য প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে প্রকৌশলী ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং লালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে রাজশাহী প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
জুয়েলের মা জামেলা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর অর্থাভাবে বারবার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়েছে। তবে ভালো রেজাল্ট করার কারণে বিভিন্নভাবে পাওয়া সহযোগিতা দিয়ে লেখাপড়া চালিয়েছে জুয়েল, পাশাপাশি নিজে টিউশুনিও করেছে। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে। কষ্টের দিনগুলো তার এখন শেষ হয়েছে, আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
জুয়েল আলী বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় মায়ের পাশাপাশি আমাকেও সংসারে হাল ধরতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়েছে। কয়েকবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষকদের সহযোগিতায় আবারও পড়াশোনা শুরু করি। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর থেকে একটি ব্যাংক ও ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পেয়েছিলাম। এই বৃত্তির মাধ্যমে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছি। পরে বিসিএসের জন্য আমার স্ত্রী মানসিক ও আর্থিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সব সময় চাইতাম মায়ের মুখে হাসি ফুটাবো। একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন ছিল। আজ সাফল্যের চ‚ড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছি। দায়িত্ব পালনকালে সব সময় আমি ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত কাজটা সঠিকভাবে করব।