শাল্লা প্রতিনিধি::-সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ডুমরার আখড়ার কর্তা গুরুচরন দাশ তার মোহন্ত সেবায়িতের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। ওই সেবায়িতের সাথে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আখড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে ডুমরা গ্রামবাসী ও সেবায়িতের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এবং আখড়ার সেবায়িতের সুযোগ ব্যবহার করে তিনি আখড়ার অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি অবৈধ ভাবে বিক্রি করে দেন।
এসব নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ডুমরা গ্রামবাসী গুরুচরন দাশের সাথে নানা ধরনের জ্বামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে চলতি মাসের ৭ আগস্টে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব ও অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম তাদের যাবতীয় বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও গুরুচরন দাশের অনিহার কারনে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সবাই ব্যর্থ হন। সেদিনই ওই আখড়ার সেবাইত ঘোষণা দিয়েছিলেন সে ডুমরার আখড়ার সেবাইত দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবেন। এরই দ্বারা বাহিকতায় আজ ২৮ আগস্ট সোমবার গুরুচরন দাশ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যান।
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিল। আখড়ার পূজারী ও গ্রামবাসীর মধ্যে এমনভাবে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল যে, গুরুচরন দাশ মোহন্ত ও ডুমরা গ্রামবাসীর পরিস্থিতি সবসময় উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল । সেই বিরোধ থানায় বসে আলোচনার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মধ্যস্ততায় সমাধান করার চেষ্টা চলছিল কিন্তু পরবর্তীতে গুরুচরন দাশ কোনকিছুতে রাজি না হওয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।
এব্যাপারে ওই আখড়ার সেবায়েত গুরুচরণ দাসকে একাধিকবার ফোন করেও ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায় প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই আখড়াটিতে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে গ্রাম ও সেবায়েতের মধ্যে চরম বিরোধ চলে আসছিল। যেকারণে ঐতিহাসিক ওই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকলেও আখড়ার কোনো ধরনের উন্নয়নই হয়নি। বন্ধ ছিল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানও। তবে ৭ আগষ্ট শাল্লা থানায় বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা চলছিল।
এবিষয়ে ডুমরা আখড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাস বলেন আখড়ার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৫ একর। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি রয়েছে ১২একর। এই সম্পত্তি নিয়েই মূলত দীর্ঘদিন ধরে আখড়ার সেবায়েতের সাথে গ্রামবাসীর বিরোধ চলে আসছিল। বার বার আখড়ার কর্তা গ্রামে অশান্তির সৃষ্টি করেন, ধর্মীয় কাজের দায়িত্বে থেকেও তিনি শুধু মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে থাকতেন। তাই আমরা গ্রামবাসী গতকাল মিটিংয়ে বসেছিলাম।
তিনি বলেন কর্তা ডুমরা, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও তথা এলাকার ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল লোকজনের সরলতার সুযোগে গত ২৮বছরের আখ্ড়ার কোনো হিসাব আমাদের কমিটিকে দেয়নি, এনিয়ে তার সাথে আমাদের অনেক মামলা মোকদ্দমা চলমান শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব মিমাংশার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেবাইত গুরুচরন দাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কথা অমান্য করে সে তার মতোই অনৈতিক জীবন-যাপনে ব্যস্ত হয়ে গেছেন।
পরে শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম ও ৩নং বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী নান্টুর হস্তক্ষেপে বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য একটি উদ্যােগ নেওয়া হয়েছিল। এতে সেবাইত চলতি মাসের ২৫ তারিখ আখড়া ছেড়ে চলে যাবার কথা।খবর পেয়েছি তিনি স্বেচ্ছায় আখড়া থেকে চলে গেছেন। কর্তা দীর্ঘ ২৮ বছরে আখ্ড়ার অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি বিভিন্ন লোকের কাছে বন্ধক রেখে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চলে যান।