লিওনেল মেসি বিশ্ব ফুটবলে এক সুপার হিরোর নাম। এক জাদুকরী খেলার স্রস্টায় পরিনত হচ্ছেন দিন দিন। এবার নতুন করে আবারও দেখালেন তঁার জাদুমত্তা। কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে লাতিন চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে বলতে গেলে উড়ে গেল ক্রোয়েশিয়া। মেসির রেকর্ড গড়ার রাতে ক্রোয়াটদের ৩-০ গোলে হারিয়ে ৮ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে এক গোল করেন মেসি। বাকি দুই গোল আলভারেজের। এর মধ্যে একটি অ্যাসিস্ট মেসির। এই ম্যাচে মেসির রেকর্ড হয়েছে তিনটি।
গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ ছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার সেমি থেকেই বিদায় নিতে হলো মদ্রিচদের। গত আসরে এই ক্রোয়েশিয়ার সাথে গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। একই স্কোরে সেই শোধটা মেসিরা নিল এবার কাতারে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে মেসিদের প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বিজয়ী (ফ্রান্স-মরক্কো)।
পেনাল্টি থেকে ম্যাচের প্রথম গোল আসে মেসির জাদুকরি পা থেকে। তাতেই স্বদেশি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান মেসি (১১ গোল)। চলমান বিশ্বকাপে মেসির গোল ৫টি, এমবাপ্পের সঙ্গে সমান।
বিশ্বকাপে মেসি এখন সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা অধিনায়কও (১৯ ম্যাচ)। ছাড়িয়ে গেছেন মেক্সিকোর রাফা মার্কেজকে (১৮)। আবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলা জার্মানির লোথার ম্যাথিউসকেও স্পর্শ করেছেন মেসি এই ম্যাচে। ফাইনালে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মেসি হয়ে যাবেন বিশ্বকাপে এককভাবে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার। এক ম্যাচে মেসির তিন রেকর্ড, সত্যিই বিস্ময়কর।
লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে আধিপত্য ছিল ক্রোয়েশিয়ার। বল পজিশনে মদ্রিচরা ছিল বেশ এগিয়ে। তবে ২৫ মিনিটের পর ম্যাচে ধীরে ধীরে ফেরে আর্জেন্টিনা। রক্ষণ অটুট রেখে পাল্টা আক্রমণে যায় মেসিরা।
৩৪ মিনিটে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। নিজেদের বক্সের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ আলভারেজকে ফেলে দিলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এরপর স্পট কিকে মেসির দুর্দান্ত ফিনিশিং।
৩৯ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেজের বিস্ময়কর গোল। প্রতি আক্রমণ থেকে নিজেদের অর্ধে বল ধরে প্রায় ৫০ গজ দৌড়ে যান তিনি। বক্সের বাইরে তিন ডিফেন্ডারকে চমক দিয়ে বক্সে ঢোকেন। লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে ক্রোয়েশিয়ার জাল কাঁপান তিনি (২-০)। ৪২ মিনিটে তৃতীয় গোল করে ফেলতে পারত আর্জেন্টিনা। মেসির কর্নার থেকে জোরালো হেড করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। কোনো রকমে সেই বল বাঁচান ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে ৫ শট নেয় আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে চারটিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া চারটি শট নিলেও লক্ষ্যে থাকেনি একটিও। প্রথমার্ধে দুই দলই পায় একটি করে কর্নার।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল পেতে পারতেন মেসি। কিন্তু তার জোরালো শট সরাসরি প্রতিহত করেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। ৬৯ মিনিটে ব্যবধান ৩-০ করে আর্জেন্টিনা। গোলটি করেন আলভারেজ। তবে গোলটি যত না তার, এর চেয়ে অনেক বেশি মেসির। ডান প্রান্তে সাইড লাইনের কাছে বল ধরে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে এগিয়ে যান মেসি। পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে বক্সে ঢোকেন। তার পরে বল রাখেন অরক্ষিত আলভারেজের কাছে। ডান পায়ে তার দুর্দান্ত ফিনিশিং (৩-০)।
একটু পর আলভারেজকে তুলে নেন আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি। তার বদলে মাঠে নামেন পাওলো দিবালা, যার খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল সবাই। চলমান বিশ্বকাপে এই প্রথম মাঠে নামলেন রোমার তারকা এই স্ট্রাইকার।
শেষের দিকে গোলের জন্য মরিয়া ছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই গোলের নাগাল পায়নি মদ্রিচরা। ৩-০ গোলের দাপুটে জয়ে ফাইনালে যাওয়ার আনন্দে মাতে টিম আর্জেন্টিনা।
ম্যাচে বল পজিশনে অনেক এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া, শতকরা ৬১ ভাগ। তবে ১২টি শটের মধ্যে দুটি মাত্র লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল মদ্রিচরা। সেখানে ৩৯ ভাগ বল পজিশনে রাখলেও ৯টি শটের মধ্যে সাতটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল আর্জেন্টিনা। মেসিরা মাত্র দুটি কর্নার আদায় করতে পারলেও ক্রোয়েশিয়া পেয়েছিল ৪টি।