রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের ৬০ ফিট রোডে লেগুনার ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে বসে আছেন যাত্রী আরিফুল হক তুহিন। তিনি ৬০ ফিট বারেক মোল্লা সড়ক থেকে বাংলাদেশ বেতারের সামনে নামবেন। ১০ কিলোমিটার দূরের পথ যেন তার ফুরায় না।
আরিফুল ইসলাম বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশ বেতার হয়ে ফার্মগেটে যাবো। ৬০ ফিট সড়কে লেগুনা ও রিকশা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে চলাচল সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে জীবন হাতে নিয়ে লেগুনায় চলাচল করি। ছোট ছোট ছেলেরা লেগুনা চালায়। এদের হাতে স্টিয়ারিং দেখে সত্যিই বুকে কাঁপন ধরে।
এতে বলা হয়, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হবে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অন্য কোনো কর্মচারী।
কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স মঞ্জুরের শর্তে বলা হয়েছে, বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
অথচ ৬০ ফিট মনিপুর স্কুলের সামনে লেগুনার যাত্রীদের জন্য হাঁকডাক করছে শিশু কন্ডাক্টর। তার বয়স ১২ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে তার স্কুল আঙ্গিনায় ছোটাছুটি করার কথা। কাছে গিয়ে জানা যায় তার নাম সাব্বির, জন্মস্থান ভোলা। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় করে সে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের কিশোররা লেগুনা চালাচ্ছে। প্রতিটি লেগুনায় ১৪-১৫ জন যাত্রী যাতায়াত করেন। বেশিরভাগ চালকের বয়স ১৮ বছরের অনেক কম। চালক বাদে চালকের সহকারী সবই শিশু। এ শিশুদের বয়স ছয় থেকে ১২ বছর। এই শিশুরা লেগুনার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া সংগ্রহ করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করে যে কোনো সময় হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
জানা যায়, বেশিরভাগ লেগুনার চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই। কম খরচে তাদের ওপর মালিকপক্ষের প্রভাব বিস্তার করতে সহজ হওয়ায় শিশু-কিশোরদের দিয়ে লেগুনা চালানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বিআরটিএ অভিযান চালায়। কিছু সময় বন্ধ রেখে আবারও কিশোররা লেগুনা হাঁকিয়ে চলে সড়কে। শিশু কন্ডাক্টরদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়- লেগুনায় এমনিতেই চড়তে এসেছে, কাজের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত নেই।
কামরুজ্জামান (১৯) নামে এক চালক বলেন, যাদের বয়স ছোট তারা কেউ লেগুনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তারা সবাই বেড়াতে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, প্রায় ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা করেছে, যার মধ্যে গণপরিবহন অন্যতম। এছাড়া শিশুদের দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ না করানোর কথাও বলা হয়েছে। যদিও এ নিয়ম কোথাও মানা হয় না।