ঢাকা , বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo শান্তিগঞ্জে প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে নিরীহ পরিবারের ধান কেটে নেয়ার অভিযোগ Logo তাহিরপুর সীমান্তে ইয়াবাসহ যুবক আটক Logo কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবীতে সুনামগঞ্জে প্রতীকী অনশন Logo কিংবদন্তি চিকিৎসক ডা. রাসেন্দ্র কুমার তালুকদার আর নেই Logo জগন্নাথপুরে কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা Logo দোয়ারাবাজারে বিজিবির মামলায় ষড়যন্ত্র মূলক নাম জড়ানোর প্রতিবাদ Logo জগন্নাথপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামী সহ গ্রেপ্তার ২ Logo দিরাইয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য যুবলীগ নেতা গ্রেফতার Logo ইউনানের গভর্নরের সাথে সাক্ষাতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা Logo আইজিপির সঙ্গে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ

ছিনতাইয়ের শিকার মানুষ যে কারণে থানায় যেতে চান না

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ণা আক্তার ইতি ছিনতাইয়ের শিকার হন গত ২ এপ্রিল। রাজধানীর আফতাবনগরের সি ব্লকে ওইদিন রাত ১০টার দিকে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।  আহতাবস্থায় তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান। ঘটনার পরদিনও তিনি কোনও মামলা দায়ের করেননি। এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘থানার পক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ছিনতাইয়ের মামলা করানো হয়। পরে সেই মামলায় ছিনতাইকারীকে আটক  এবং ইতির মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।গণমাধ্যমে কাজ করেন কামরুল ইসলাম। তিন বন্ধু মিলে মাসকয়েক আগে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় ঘুরতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। তিনটি বাইকে আসা ছয় ছিনতাইকারী তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর কামরুল ইসলাম থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু মামলা না করেই ফিরে আসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলা নিতে পুলিশের অনাগ্রহ ও মামলা করলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার অনীহা থেকেই মামলা করা হয়নি।ইতি ও কামরুলের মতো আরও অনেকেই ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানা পর্যন্ত যেতে চান না। থানায় গিয়ে হয়রানির আশঙ্কা ও বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ণা আক্তার ইতি কেন মামলা করতে চাননি তা জানা যায়নি। কিন্তু পুলিশের উৎসাহে মামলাটি হওয়ার পর ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়। কী কারণে মামলা করতে মানুষের অনীহা জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন— মামলা করে কী হবে। কিন্তু মামলা না করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। থানায় গিয়ে হয়রানির শিকার হলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।’ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাজধানীতে ছিনতাই কিংবা দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪৫টি। এ বছর (২০২৩) জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি— এই দুই মাসে ছিনতাইয়ের মামলার হয়েছে ৩৪টি। পুলিশ মামলা না নিলে এসব মামলা হলো কী করে? এমন প্রশ্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষ মামলা করতে চায় না মূলত আইনি জটিলতায় পড়বে বলে। কারণ, মামলা করতে হলে তাকে আদালতে যেতে হবে। থানায় যেতে হবে। অনেকেই ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে হলে মামলা করতে চায় না। কিন্তু থানায় মামলা করতে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হয়, তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘মামলা না করলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। ভুক্তভোগীর কী লাভ হবে, সেটা অন্য বিষয়। মামলা না করলে পুলিশ সেটা আমলে নেবে কী করে। আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ— যারা বা যিনি ছিনতাইয়ের শিকার হবেন, তিনি যেন থানায় গিয়ে মামলা করেন। তাহলে অপরাধীকে ধরতে আমাদের সহজ হয়।’ছিনতাই কিংবা দস্যুতার শিকার হয়েও মানুষ কেন থানায় যেতে চায় না জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের অনাস্থা ও অনীহা আছে। এর কারণ হচ্ছে, পুলিশ প্রায়ই বলে, সাক্ষী নিয়ে আসেন। না হয় চুরির মামলা করেন। নানারকম কথা বলার কারণে মানুষ পুলিশের সাহায্য নিতে আগ্রহী হয় না। তাছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটা মনিটরিং থাকে যে, কোন থানায় অপরাধ বেশি, কোন থানায় কম। বেশি হলে জবাবদিহির বিষয় থাকে। সেক্ষেত্রে থানা-পুলিশের মানসিকতা হচ্ছে, এমন ঘটনা কম দেখাতে হবে।’একই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ছিনতাই হলে মামলা করতে না যাওয়া ও মামলা না নেওয়ার প্রবণতার অভিযোগ পুরনো। সাধারণত এসব মামলা হলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষ মামলা করতে চায় না। পুলিশেরও এক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মামলা নিতে কিংবা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হন। নানা হেনস্তার শিকার হন। তারপরও কেন থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে চান না। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিচারিক প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি ডেভেলপ করেনি। ক্রিমিনাল জাস্টিসের তিনটা অংশ। পুলিশ, কোর্ট ও প্রিজন। এগুলো যেভাবে আধুনিকায়ন হওয়ার কথা, সেটা হয়নি। ফলে এখনও উপনিবেশিক মানসিকতা রয়ে গেছে। কাঠামোগতভাবে ডেভেলপ করেনি। এগুলো যখন বৃটিশরা তৈরি করছিল, তখন শোষণমূলক এজেন্ট হিসেবে সেটা করেছিল, যা এখনও আমরা বহন করে চলেছি।’অপরাধ বিষয়ক এই অধ্যাপক বলেন, ‘দুর্নীতি, রাজনীতিকরণসহ নানা কারণে কারণে মানুষের আস্থাটা পুলিশের প্রতি খুবই কম। বিশেষ করে যারা খুবই নিম্নআয়ের মানুষ, যারা পাওয়ারের মধ্যে নাই, তাদের মধ্যে অনীহাটা বেশি। আইন নিজস্ব গতিতে চলে বলা হয়, কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখি— আইন নিজস্ব গতিতে চলে না। পুলিশিং যে একটা সার্ভিস, যা আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে ডেভেলপ করেছে, সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে এখনও পুলিশ ‘ফোর্স’ রয়ে গেছে। তাই ভীতিটা মানুষের মনে রয়ে গেছে। ফলে বড় রকমের কিছু না হলে মানুষ বাড়তি বিড়ম্বনা নিতে চায় না। থানায় গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে, কোর্টে দিনের পর দিন তারিখ পড়বে। তাছাড়া পরে যে ছিনতাইকারীরা ভুক্তভোগীর বড় রকমের ক্ষতি করবে না— এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।’তিনি বলেন, ‘পুলিশেরও সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট, জনবল সংকট, ট্রেনিং ও জবাবদিহির অভাব আছে। এ অবস্থায় পুলিশ চাইলেও যে অনেক কিছু করতে পারবে, তা মনে করার কোনও কারণ নাই। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলেই কেবল এগুলো কমে আসবে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

শান্তিগঞ্জে প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে নিরীহ পরিবারের ধান কেটে নেয়ার অভিযোগ

ছিনতাইয়ের শিকার মানুষ যে কারণে থানায় যেতে চান না

আপডেট সময় ১২:৫০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ণা আক্তার ইতি ছিনতাইয়ের শিকার হন গত ২ এপ্রিল। রাজধানীর আফতাবনগরের সি ব্লকে ওইদিন রাত ১০টার দিকে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।  আহতাবস্থায় তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান। ঘটনার পরদিনও তিনি কোনও মামলা দায়ের করেননি। এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘থানার পক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ছিনতাইয়ের মামলা করানো হয়। পরে সেই মামলায় ছিনতাইকারীকে আটক  এবং ইতির মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।গণমাধ্যমে কাজ করেন কামরুল ইসলাম। তিন বন্ধু মিলে মাসকয়েক আগে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় ঘুরতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। তিনটি বাইকে আসা ছয় ছিনতাইকারী তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর কামরুল ইসলাম থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু মামলা না করেই ফিরে আসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলা নিতে পুলিশের অনাগ্রহ ও মামলা করলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার অনীহা থেকেই মামলা করা হয়নি।ইতি ও কামরুলের মতো আরও অনেকেই ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানা পর্যন্ত যেতে চান না। থানায় গিয়ে হয়রানির আশঙ্কা ও বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ণা আক্তার ইতি কেন মামলা করতে চাননি তা জানা যায়নি। কিন্তু পুলিশের উৎসাহে মামলাটি হওয়ার পর ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়। কী কারণে মামলা করতে মানুষের অনীহা জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন— মামলা করে কী হবে। কিন্তু মামলা না করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। থানায় গিয়ে হয়রানির শিকার হলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।’ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাজধানীতে ছিনতাই কিংবা দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪৫টি। এ বছর (২০২৩) জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি— এই দুই মাসে ছিনতাইয়ের মামলার হয়েছে ৩৪টি। পুলিশ মামলা না নিলে এসব মামলা হলো কী করে? এমন প্রশ্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষ মামলা করতে চায় না মূলত আইনি জটিলতায় পড়বে বলে। কারণ, মামলা করতে হলে তাকে আদালতে যেতে হবে। থানায় যেতে হবে। অনেকেই ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে হলে মামলা করতে চায় না। কিন্তু থানায় মামলা করতে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হয়, তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘মামলা না করলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। ভুক্তভোগীর কী লাভ হবে, সেটা অন্য বিষয়। মামলা না করলে পুলিশ সেটা আমলে নেবে কী করে। আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ— যারা বা যিনি ছিনতাইয়ের শিকার হবেন, তিনি যেন থানায় গিয়ে মামলা করেন। তাহলে অপরাধীকে ধরতে আমাদের সহজ হয়।’ছিনতাই কিংবা দস্যুতার শিকার হয়েও মানুষ কেন থানায় যেতে চায় না জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের অনাস্থা ও অনীহা আছে। এর কারণ হচ্ছে, পুলিশ প্রায়ই বলে, সাক্ষী নিয়ে আসেন। না হয় চুরির মামলা করেন। নানারকম কথা বলার কারণে মানুষ পুলিশের সাহায্য নিতে আগ্রহী হয় না। তাছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটা মনিটরিং থাকে যে, কোন থানায় অপরাধ বেশি, কোন থানায় কম। বেশি হলে জবাবদিহির বিষয় থাকে। সেক্ষেত্রে থানা-পুলিশের মানসিকতা হচ্ছে, এমন ঘটনা কম দেখাতে হবে।’একই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ছিনতাই হলে মামলা করতে না যাওয়া ও মামলা না নেওয়ার প্রবণতার অভিযোগ পুরনো। সাধারণত এসব মামলা হলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষ মামলা করতে চায় না। পুলিশেরও এক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মামলা নিতে কিংবা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হন। নানা হেনস্তার শিকার হন। তারপরও কেন থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে চান না। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিচারিক প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি ডেভেলপ করেনি। ক্রিমিনাল জাস্টিসের তিনটা অংশ। পুলিশ, কোর্ট ও প্রিজন। এগুলো যেভাবে আধুনিকায়ন হওয়ার কথা, সেটা হয়নি। ফলে এখনও উপনিবেশিক মানসিকতা রয়ে গেছে। কাঠামোগতভাবে ডেভেলপ করেনি। এগুলো যখন বৃটিশরা তৈরি করছিল, তখন শোষণমূলক এজেন্ট হিসেবে সেটা করেছিল, যা এখনও আমরা বহন করে চলেছি।’অপরাধ বিষয়ক এই অধ্যাপক বলেন, ‘দুর্নীতি, রাজনীতিকরণসহ নানা কারণে কারণে মানুষের আস্থাটা পুলিশের প্রতি খুবই কম। বিশেষ করে যারা খুবই নিম্নআয়ের মানুষ, যারা পাওয়ারের মধ্যে নাই, তাদের মধ্যে অনীহাটা বেশি। আইন নিজস্ব গতিতে চলে বলা হয়, কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখি— আইন নিজস্ব গতিতে চলে না। পুলিশিং যে একটা সার্ভিস, যা আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে ডেভেলপ করেছে, সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে এখনও পুলিশ ‘ফোর্স’ রয়ে গেছে। তাই ভীতিটা মানুষের মনে রয়ে গেছে। ফলে বড় রকমের কিছু না হলে মানুষ বাড়তি বিড়ম্বনা নিতে চায় না। থানায় গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে, কোর্টে দিনের পর দিন তারিখ পড়বে। তাছাড়া পরে যে ছিনতাইকারীরা ভুক্তভোগীর বড় রকমের ক্ষতি করবে না— এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।’তিনি বলেন, ‘পুলিশেরও সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট, জনবল সংকট, ট্রেনিং ও জবাবদিহির অভাব আছে। এ অবস্থায় পুলিশ চাইলেও যে অনেক কিছু করতে পারবে, তা মনে করার কোনও কারণ নাই। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলেই কেবল এগুলো কমে আসবে।’