ঢাকা , বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo শান্তিগঞ্জে কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন Logo শান্তিগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়  Logo সুনামগঞ্জের জিল্লুর রহমান সহ ছয় অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি Logo দিরাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে কোন অনিয়ম দালালির সাথে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে Logo ল্যাব সংস্কারের টাকা আত্মসা শাল্লায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তুলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোব! Logo শান্তিগঞ্জে জামায়াতের উদ্যোগে সিরাত মাহফিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান Logo অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি নয়, বিধবা কার্ড বাতিলের অভিযোগ Logo বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সীমান্তিকের উদ্যাগে বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস উদযাপন Logo সিলেটে পাথরবাহী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঔষধ কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার নিহত Logo পাথারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃআলী নেওয়াজের ইন্তেকাল

‘সম্বল ছিল একটা ঘর, তাও ভাঙলো তুফানে’

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ভাঙা ঘরে অস্থায়ী আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষদের বৃহস্পতিবারের (১৮ মে) বৃষ্টিতে দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পে হাজারো রোহিঙ্গারা বিপাকে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই চান তারা।সত্তরোর্ধ্ব খতিজা বেগম। থাকেন সমুদ্রের পাড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মাঝার পাড়ায়। ভাঙা ঘরের সামনে কাঁদছিলেন। কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একমাত্র সহায়-সম্বল ছিল একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরও তুফানে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। সেখানে কাপড় টাঙিয়ে এক রাত পার করছিলাম। কিন্তু আবার ঝড়বৃষ্টিতে সেটিও ভেঙে গেছে। এখন কী হবে, কই যাব? কোথায় থাকব জানি না। সব শেষ হয়ে গেছে। এখনো কোনও সহায়তা পাইনি।’নাফনদের উত্তর পাড়া গ্রামের দিলু আলম। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তিনি বলেন, ‘চার দিন পার হয়ে গেছে এখনো কোনও সহায়তা পাইনি। তার ওপর গতকালের বৃষ্টি আমাদের আরও কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙা ঘর বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এখন থাকার জায়গা ও খাবারের কিছু নেই।সেন্টমার্টিনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় দ্বীপের ঘরহারা মানুষদের দুর্দশা বেড়েছে। এ ছাড়া দ্বীপে এসব মানুষের নেই খাবার, থাকার ঘর ও বিদ্যুৎ।

 ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরসেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা রুমা আক্তার। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পাশে আজিজ উল্লাহর বাড়িতে আশ্রয় নেন। রুমা জানান, বৃষ্টির কারণে পাশের ঘরে কাদা হয়ে গেছে। সেখানে তার আর থাকা হচ্ছে না। চার দিন হয়ে গেলেও কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। পায়নি কোনও ত্রাণ সহায়তাও। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গাছচাপায় তছনছ হয়ে যায় তার ঘর। এখনও সেভাবেই রয়েছে।সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছি উল্লেখ করে টেকনাফের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ডাল, চিনিসহ দুই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। পাশাপাশি গৃহহীন ২০০ মানুষকে ঢেউটিন ও নগদ ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে।’এদিকে ক্যাম্পের কাঁচা রাস্তা কর্দমাক্ত হওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে ক্যাম্পে বসবাসকারী ঘূর্ণিঝড়ে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের। টেকনাফের লেদার জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্য একটি তাঁবুতে রান্নার জন্য মাটির চুলায় আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেছে। তাই বৃষ্টির জন্য কিছুই রান্না করা যাচ্ছে না। চুলার নিচে পানি জমে থাকায় সকাল থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারিনি। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে বসে আছে। কিছু বিস্কুট ছিল, তা দিয়েছি। দুপুরেও খাওয়া হয়নি। রান্না করতে না পারলে রাতে কী খাওয়াবো জানি না।’

 ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘর

ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরটেকনাফে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভেঙে যাওয়া তাঁবু ঠিক করতে ব্যস্ত এক পরিবারের চারজন। ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘চাল-ডাল ছাড়া আর কিছু পাইনি। তাছাড়া বৃষ্টিতে তাঁবু তছনছ হয়ে গেছে। রান্না করার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় ছেলেমেয়েদের খাবার দিতে পারছি না।’টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান বজলু রহমান বলেন, ‘আমার ক্যাম্পে চল্লিশ হাজার মানুষের বসতি। ঘূর্ণিঝড়ে অধিকাংশ মানুষের ঝুপড়ি ঘরগুলো ভেঙে গেছে। তবে এনজিওর পক্ষ থেকে কিছু পরিবারকে বাঁশ আর রশি দেওয়া হচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।’ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘরহারা মানুষদের ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ প্রদান করছি দ্বীপে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন

শান্তিগঞ্জে কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন

‘সম্বল ছিল একটা ঘর, তাও ভাঙলো তুফানে’

আপডেট সময় ০৬:২৭:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ভাঙা ঘরে অস্থায়ী আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষদের বৃহস্পতিবারের (১৮ মে) বৃষ্টিতে দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পে হাজারো রোহিঙ্গারা বিপাকে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই চান তারা।সত্তরোর্ধ্ব খতিজা বেগম। থাকেন সমুদ্রের পাড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মাঝার পাড়ায়। ভাঙা ঘরের সামনে কাঁদছিলেন। কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একমাত্র সহায়-সম্বল ছিল একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরও তুফানে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। সেখানে কাপড় টাঙিয়ে এক রাত পার করছিলাম। কিন্তু আবার ঝড়বৃষ্টিতে সেটিও ভেঙে গেছে। এখন কী হবে, কই যাব? কোথায় থাকব জানি না। সব শেষ হয়ে গেছে। এখনো কোনও সহায়তা পাইনি।’নাফনদের উত্তর পাড়া গ্রামের দিলু আলম। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তিনি বলেন, ‘চার দিন পার হয়ে গেছে এখনো কোনও সহায়তা পাইনি। তার ওপর গতকালের বৃষ্টি আমাদের আরও কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙা ঘর বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এখন থাকার জায়গা ও খাবারের কিছু নেই।সেন্টমার্টিনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় দ্বীপের ঘরহারা মানুষদের দুর্দশা বেড়েছে। এ ছাড়া দ্বীপে এসব মানুষের নেই খাবার, থাকার ঘর ও বিদ্যুৎ।

 ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরসেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা রুমা আক্তার। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পাশে আজিজ উল্লাহর বাড়িতে আশ্রয় নেন। রুমা জানান, বৃষ্টির কারণে পাশের ঘরে কাদা হয়ে গেছে। সেখানে তার আর থাকা হচ্ছে না। চার দিন হয়ে গেলেও কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। পায়নি কোনও ত্রাণ সহায়তাও। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গাছচাপায় তছনছ হয়ে যায় তার ঘর। এখনও সেভাবেই রয়েছে।সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছি উল্লেখ করে টেকনাফের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ডাল, চিনিসহ দুই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। পাশাপাশি গৃহহীন ২০০ মানুষকে ঢেউটিন ও নগদ ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে।’এদিকে ক্যাম্পের কাঁচা রাস্তা কর্দমাক্ত হওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে ক্যাম্পে বসবাসকারী ঘূর্ণিঝড়ে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের। টেকনাফের লেদার জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্য একটি তাঁবুতে রান্নার জন্য মাটির চুলায় আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেছে। তাই বৃষ্টির জন্য কিছুই রান্না করা যাচ্ছে না। চুলার নিচে পানি জমে থাকায় সকাল থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারিনি। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে বসে আছে। কিছু বিস্কুট ছিল, তা দিয়েছি। দুপুরেও খাওয়া হয়নি। রান্না করতে না পারলে রাতে কী খাওয়াবো জানি না।’

 ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘর

ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরটেকনাফে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভেঙে যাওয়া তাঁবু ঠিক করতে ব্যস্ত এক পরিবারের চারজন। ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘চাল-ডাল ছাড়া আর কিছু পাইনি। তাছাড়া বৃষ্টিতে তাঁবু তছনছ হয়ে গেছে। রান্না করার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় ছেলেমেয়েদের খাবার দিতে পারছি না।’টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান বজলু রহমান বলেন, ‘আমার ক্যাম্পে চল্লিশ হাজার মানুষের বসতি। ঘূর্ণিঝড়ে অধিকাংশ মানুষের ঝুপড়ি ঘরগুলো ভেঙে গেছে। তবে এনজিওর পক্ষ থেকে কিছু পরিবারকে বাঁশ আর রশি দেওয়া হচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।’ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘরহারা মানুষদের ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ প্রদান করছি দ্বীপে।’