সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
মঙ্গলবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে তো আমেরিকা ভিসানীতি দিচ্ছে না। কারণ, যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে— সেখানে যদি ভিসানীতি ঘোষণা করে, তাহলে তারা হাস্যকর হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেটা করছে, সেটা বিশ্বের কাছেও হাস্যকর হচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষের কাছেও হাস্যকর হচ্ছে না। কারণ, আমরা জানি ১৪ ও ১৮ সালে কোনও নির্বাচন হয়নি। সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কাজেই আমেরিকা যখন এটা বলছে, মানুষ তখন স্বাগত জানাচ্ছে। এর কারণ এই সরকার এতটাই দানবীয় শক্তি অর্জন করেছে যে, যখন আমরা মাথা ঠুকে ঠুকে বলি— এই দেশে গুম হয়, খুন হয়, ওনারা পাত্তা দেন না।’
সাকি আরও বলেন, ‘৪৭ বছর পরেও ফারাক্কা লংমার্চ যে রাজনৈতিক দিশা নিয়ে হয়েছিল তা প্রাসঙ্গিক। আগ্রাসী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানুষকে মুনাফার জন্য প্রকৃতিকে ধ্বংসে প্ররোচিত করে। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির অপরাপর প্রাণ ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। এই বাঁধাগুলো শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংকট না, ভারতের স্থানীয়দের জন্যেও সংকটের।’
দেশের প্রধান দলগুলো সার্বভৌমত্বের রাজনীতি করতে পারেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা তাদের গদি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ না করে বিভক্ত করছে। শুধু বলে খেলা হবে, খেলা হবে। স্টেডিয়াম ওনাদের, খেলোয়ার ওনাদের, গ্যালারিভর্তি দর্শক ওনাদের। বিরোধী সবাইকে স্টেডিয়াম থেকেই বের করে দিয়েছে।’
সরকারের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সাহস থাকলে আমেরিকার জন্য ভিসানীতি করেন। আমেরিকার আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ ভিসানীতি দেবে। আমেরিকা যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তা সাধারণ মানুষ বা বিরোধী দলের জন্য নয়, বরং সরকারের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিসানীতিতে যেসব বলা হয়েছে— তা একটু পড়লে গাধাও বুঝবে— এটা সরকারের জন্য দেওয়া হয়েছে। আমলা, পুলিশ, বিচার কি সরকার চালায় না অন্যরা চালায়? ভোটারদের বাধা দেওয়া, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, এগুলো ২০১৪-১৮ সালে কারা করেছে?’
সাকি বলেন, ‘বিকল্প আছে কিনা এটা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন মানেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কোনোদিন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রয়োজনে সব দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে৷’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে এখনও মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দুই বার ভারত গেলেন, কিন্তু তিস্তার পানি চুক্তি হওয়ার খবর নেই। কিন্তু ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের চুক্তি করে এলেন। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এখনও বন্ধ হয়নি। অথচ বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে চুক্তি হচ্ছে। ভারত ট্রানজিট চাওয়ার আগেই আমরা তাদের দিয়ে দিয়েছি। এই সরকারের নৈতিক ক্ষমতা, জনভিত্তি কোনোটাই নেই। এই সরকার দিল্লিতে আম, বেনারসি, ইলিশ পাঠায়। তবে এসব পাঠিয়ে কূটনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের নতজানু যে পররাষ্ট্রনীতি, তার জন্য আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দায় বলেন, ‘দেশ ও জাতির স্বার্থে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম যেমন চালিয়ে যাবো, তেমনই সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধেও আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। জাতীয় স্বার্থে আগামী দিনে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি আজও আমরা পাচ্ছি না। ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ— বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠা করুন। কিন্তু আদানির চুক্তির মতো হলে আর কেউ প্রতিবাদ না করলেও আমরা করবো।’