শাল্লায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাব নিয়ে তেলেসমাতি
অভিযোগের তীর কেরানি ও সহ:শিক্ষক মোনতাসির আহমেদের দিকে
শাল্লা প্রতিনিধি ::-
সুনামগঞ্জের শাল্লায় মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ট্যাবলেট (ট্যাব) বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে। তবে প্রধান শিক্ষক দায় চাপালেন বিদ্যালয়ের কেরানি রাফিক আহমেদ রনি ও খন্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদের উপর।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে ট্যাবগুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেননি।সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সমন্বিত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মনোনীত করতে বলা হয়েছে।প্রধান শিক্ষক তা না করে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদের ছেলে ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মিয়ার নাতনীর মাঝে ট্যাব বিতরণ করেছেন।
জানা যায় গত ১২এপ্রিল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেবের সভাপতিত্বে ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাসের সঞ্চালনায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিসংখান অফিসের উদ্যোগে জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্প হতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী তিনজন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ৮৪টি ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ইমা আক্তার ও দিলচান মিয়ার নাম নেই। নিয়মবহির্ভূত করে অবৈধভাবে দুটি ট্যাব দিয়ে দেন ৪র্থ স্থান অধিকারী লিজা আক্তার ও ১৫তম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী ওই স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদের ছেলে মাহফুজ আহমেদ (শাকিল) কে। বিদ্যালয়ের প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী ইমা আক্তার ও দিলশাদ মিয়া নিয়ম অনুযায়ী তারা ট্যাব পাওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় ওই ট্যাব থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
শিক্ষার্থী ইমা আক্তার বলেন প্রধান শিক্ষক ও মোনতাসির আহমেদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নবম শ্রেণিতে প্রথম হয়েও ট্যাব পেলাম না। আমি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী আমাকে ট্যাব দিতেই হবে। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারসামগ্রী ট্যাব না পেয়ে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দিলচাঁনের অভিভাবক জানান,আমার ভাগনা রোল নম্বর তৃতীয় সে শিক্ষকদের স্বজনপ্রীতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার পায়নি।একটা সমান্য ট্যাবের লোভ যদি উনারা সামলাতে না পারে তাহলে বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা কেমন তা ভাবনার বিষয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ট্যাবের বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষকের সাথে মিটিংয়ে বসেন।নিয়মবহির্ভূতভাবে দেওয়া একটি ট্যাব ইতোমধ্যে ফিরিয়ে প্রধান শিক্ষকের হাতে এনেছে বলে জানা যায়। ট্যাব অনিয়মের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তবে কোনকিছুতেই মানতে নারাজ ট্যাব বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।
এবিষয়ে কেরানি রাফিক আহমেদ রনির সাথে কথা হলে তিনি তার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন এবং খন্ডকালিন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদ বলেন এবিষয়টি নিয়ে আমি লজ্জায় আছি। সম্পূর্ণটা আমার ভুল এবং তার ছেলের নামে নেয়া ট্যাবটি ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকের কাছে ফেরত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ মঞ্জিল মিয়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক জনান, কোনকিছুর ব্যাপারে মাষ্টাররা আমাদেরকে কিচ্ছু জানায়নি। ট্যাব নিয়ে শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যা করেছে তা একদম ঠিক করেননি।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব জানান তিনি উপস্থিত ছিলেন না কেরানি রাফিক আহমেদ রনি ও খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদের নির্দেশনায় ট্যাব প্রাপ্তদের তালিকা কারচুপি করেছে। আমার কথা অমান্য করে স্বজনপ্রীতি করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মহিতোষ চন্দ্র দাশের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব বলেন,আমি বিষয়টা খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।