শাল্লায় নিয়োগ পরিক্ষার ১৮ দিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস!নিয়োগে সীমাহীন দূর্নীত
শাল্লা প্রতিনিধি::-সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরিক্ষার ১৮ দিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরিক্ষার্থীরা। অনেকেই উচ্চ পর্যায়ের সুপারিশ ও টাকার মাধ্যমে এসব প্রশ্ন পেয়েছেন বলে জানা যায়।
শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদ নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে গতকাল ৬ আগস্ট বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী ও চাকরি প্রত্যাশী ছেলে-মেয়েরা। এবং
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাসের আপন শ্যালক অফিস সহায়ক পদে পরিক্ষায় ১৮ দিন আগে,অফিস সহায়ক পদে রাসেল চন্দ্র দাস আট দিন আগে ও অফিস সহায়ক প্রার্থী আকাশ দাস পরিক্ষার আগের দিন প্রশ্ন পেয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি একজন অফিস সহায়ক প্রার্থীর একটি কল রেকর্ডের মাধ্যমে জানা গেছে।
বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকেরা ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকে অনুপস্থিত পান। জানা যায় কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর,অফিস সহায়ক,পরিচ্ছন্নতা কর্মী এই চারটি পদেই মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিয়োগ কমিটি।
তবে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী ও সদস্য আছানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলে চাকরি প্রার্থীদের সাথে যে অবৈধ অর্থ লেনদেনে করেছেন সেসবের বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধীর চন্দ্র দাসের ছেলে রাজেশ চন্দ্র দাসকে পরিছন্নতা কর্মী ও সাবেক মেম্বার রথীকান্ত দাসের ছেলেকে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে,উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি সুপারভাইজার কালীপদ দাসের আপন শ্যালক রঞ্জন চন্দ্র দাসকে অফিস সহায়ক পদে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ পরিক্ষার্থী।
আয়া পদে সরসপুর গ্রামের জয়তারা রানী দাশকেও ৪ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানা জয়তারা রানী দাসের স্বামী রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস পাশ্ববর্তী ফয়েজুল্লাহপুর গ্রামের নাছিমা আক্তারের কাছে ১কেদার জমি বিক্রি করে ৪ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিয়েছেন বলে জানান এলাকার লোকজন ।
এই নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক অধীর রঞ্জন দাস। তিনি বলেন গত ২ আগস্টে যে নিয়োগটি দেওয়া হয়েছে এই নিয়োগে প্রধান শিক্ষকে বাণিজ্য করেছে। এবং অন্য যাদের কাছ থেকেও টাকাপয়সা নিছে তাদেরকে টাকা ফেরত দিয়েছে।
এই স্কুলের যাতে বদনাম না হয় সেজন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি। নিয়োগে অনিয়ম,দূর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রাণকৃষ্ণ দাস ও নীল রতন দাস।
প্রাণকৃষ্ণ দাস বলেন পরিক্ষায় দিন প্রশ্ন ফাঁসের রেওয়াজ আমরা শুনেছি। তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী পরিক্ষার দিন তাদেরকে বলেছেন চাকরি বুকিং হয় গেছে তোমরা আমার সাথে আরো আগে যোগাযোগ করলে হয়তো একটা কিছু করতে পারতাম।
শুধু তাই নয় শাল্লা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় বিস্তর প্রভাব কাটিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাস বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তার আপন শ্যালককে ওই বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাইয়ে দেন।
প্রভাব কাটিয়ে ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধীর চন্দ্র দাসের ছেলে ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কালীপদ দাসের আপন শ্যালককে নিয়োগ দেওয়ায় তা নিয়ে এলাকাতে সমালোচনার ঝড় উটেছে।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি পলাশ রঞ্জন দাস বলেন এই নিয়োগে কিছু অনিয়ম ও দূর্নীতির আভাস পেয়েছি। তিনি বলেন আমরা কমিটির সবাই মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দুভূষণ দাস শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটা নিয়মবহির্ভূত কাজ উল্লেখ করে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস রায় বলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অন্য কোন বিষয়ে জড়িত থাকার বিধান নেই।
আর শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সবধরনের আর্থিক লেনদেন করেছেন ইন্দুভূষণ দাস নিজেই করেছেন। আর এসব অবৈধ লেনদেনে প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পলাশ রঞ্জন দাসের সরাসরি সখ্যতা রয়েছে বলে জানা যায়।
শুধু তাই নয় এই নিয়োগ পরিক্ষার দিন পরিক্ষা কেন্দ্রে সারাদিন উপস্থিত ছিলেন এই প্রতিবেদক। তাই সরেজমিনে উপস্থিত থাকায় পরিক্ষা চলাকালীন সময়েও বাহিরের অনেক লোকদের সাথে কানেকান ফিসফিস করতে দেখা গেছে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার চৌধুরী ও সদস্য ইন্দুভূষণ দাস ইন্দুভূষণ দাসকে।
এবিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী বলেন নিয়োগ পরিক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে। নিয়োগ পরিক্ষায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ডিজির প্রতিনিধি কে ছিলেন জানতে চাইলে তাদের নাম ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। এব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য ইন্দুভূষণ চন্দ্র দাসের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তিনি আরো বলেন এখন কিছু নিয়ে যান পরে আরো দেব। প্রধান শিক্ষকে সব জানে তিনিই সব ম্যানেজ করতে পারেন।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনে নিয়োগ বাতিল করা হবে।